নতুন পে-স্কেল ঘোষণা পিছিয়ে যাওয়ার খবরে সরকারি চাকুরেদের মধ্যে বাড়ছে ক্ষোভ ও হতাশা। তারা আশঙ্কা করছেন, সঠিক সময়ে নির্বাচন না হলে ঝুলে যেতে পারে নতুন পে-স্কেল ঘোষণা। এজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদেই নতুন পে-স্কেলের দাবি জানিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের বিভিন্ন সমিতির ব্যানারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে মাঠপর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও পে-স্কেল পেছানোর ইস্যুতে ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা বলছেন, ২০১৫ সালের পর আর কোনো পে-স্কেল দেয়নি সরকার। গত ১০ বছরে দেশে জিনিসপত্রের দাম যে হারে বেড়েছে আর মূল্যস্ফীতির উচ্চ চাপের কারণে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীরা জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন। এজন্য নতুন পে-স্কেল নির্বাচনের আগেই দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আগে বলেছিলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিশনকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় রাখতে বলা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা হলো- সময় উপযোগী একটি বেতন কাঠামো ঘোষণা করা। কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সম্প্রতি দেওয়া অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্যে। ১২ নভেম্বর তিনি বলেছেন, সরকারি কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেলের সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী নয়, বরং আগামী নির্বাচিত সরকার নেবে। তবে অন্তর্বর্তী সরকার বেতন কমিশনের প্রতিবেদন (বেতনকাঠামো) চূড়ান্ত করে যাবে। তাঁর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, ১৪ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বলা হয়, পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা না হলে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে বিরত থাকবেন কর্মচারীরা। পরিষদের সমন্বয়ক মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘পে-স্কেল নির্বাচনের আগেই দিতে হবে। এটির বাস্তবায়ন না হলে কর্মচারীরা কঠোর আন্দোলনে যাবে। ১ ডিসেম্বর থেকে যত দিন পর্যন্ত পে কমিশন বাস্তবায়ন না হবে, তত দিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ বর্তমানে ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুযায়ী সরকারি কর্মচারীদের জন্য ২০টি বেতন গ্রেড রয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এ পে-স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা পান। নতুন বেতন কাঠামোতে গ্রেডের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বর্তমান বেতন কাঠামোতে বিদ্যমান বৈষম্যগুলো নতুন কমিশনে দূর করানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিশনকে।
জানা যায়, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকারি কর্মচারীদের বেতন সমন্বয়ের লক্ষ্যে গত ২৭ জুলাই অন্তর্বর্তী সরকার ২৩ সদস্যের ‘জাতীয় বেতন কমিশন, ২০২৫’ গঠন করে। কমিশনের সভাপতি করা হয় সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে। বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে সুপারিশ দেওয়াই এ কমিশনের মূল কাজ। কর্মচারীর পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয়জন ধরে আর্থিক ব্যয়ের হিসাব করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। প্রথম সভা থেকে শুরু করে ছয় মাসের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে কমিশন।
গত মাসের ১৪ তারিখ প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সে হিসাবে ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ এই কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস পূর্ণ হবে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে। তারই প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের রাজনৈতিক, আর্থিক ও সামাজিক সংকটকে আমলে নিয়ে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। কেননা আসছে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠানের জন্য জোর প্রস্তুতি চালাচ্ছে সরকার। তাই নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। তবে পে কমিশন প্রতিবেদন জমা দিলে সেই অনুযায়ী একটি বেতন কাঠামোর সুপারিশমালা চূড়ান্ত করবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর নির্বাচিত নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তা বাস্তবায়ন করা হবে। অবশ্য এই নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণা ও বাস্তবায়ন হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকুরেরা নিয়ম অনুযায়ী মহার্ঘ্য ভাতা প্রাপ্য হবেন। এমন পরিকল্পনা নিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগ।