তরুণ প্রজন্মের সামনে লোকগ্রামের হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি তুলে ধরতে প্রথমবারের মতো অগ্রহায়ণের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে উদ্যাপিত হয়েছে আদি নববর্ষ উৎসব। গতকাল সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় চিত্রশিল্পীদের রংতুলির আঁচড়ে শুরু হয় এ উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) এবং ‘বিপ্লবী সাংস্কৃতিক ঐক্য’-এর যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী এ চার পর্বের উৎসব সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে দেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের পাশাপাশি চারুকলার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জুলাই ও নবান্ন থিমে ছবি আঁকা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয় শোভাযাত্রা। এতে তিনটি মোটিফ স্থান পায়। এর মধ্যে জুলাই নিয়ে একটি, একটি জেলে জীবন নিয়ে এবং কৃষি জীবন নিয়ে একটি মোটিফ দেখা যায়। এ ছাড়াও পালকি, কৃষিকাজে ব্যস্ত এক নারী এবং জাল ছোড়া অবস্থায় একজন জেলের মোটিফ রাখা হয়। পাশাপাশি ধানের কুলা, গামছা-কাস্তে হাতে কৃষকসহ একাধিক উপাদান এই শোভাযাত্রায় দেখা যায়। এদিকে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত চারুকলার বকুলতলায় চলে আবৃত্তি, নাচ, গান ও জাদু পরিবেশনা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) ভিপি সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, আজকের (রবিবার) দিনটি বেশি স্পেশাল। কারণ আগামীকাল (সোমবার) খুনি হাসিনার রায় হবে। সেই রায়ের আগে আজকে আমরা চারুকলায় আদি নববর্ষ পালন করছি। সারা দেশের মানুষ অনেক আনন্দিত যে, ফ্যাসিস্ট হাসিনা গত ১৬ বছরে গুম, খুন, আয়নাঘর, শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়ন থেকে শুরু করে সর্বশেষ জুলাই বিপ্লবে আমাদের ৪০ হাজার ভাইবোনকে গাজী করেছে, আমাদের দুই হাজার ভাইবোনদের শহীদ করেছে, সেই খুনি হাসিনার রায় হবে আগামীকাল এবং সেটি দেশব্যাপী উদ্যাপন করব আমরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমদ খানসহ ডাকসুর অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রবীন্দ্র সরোবরে নবান্নের উল্লাস : বাংলার কৃষিসংস্কৃতি ও শস্যনির্ভর জীবনচর্চার প্রাচীনতম উৎসব নবান্নকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে পালিত হয়েছে ‘নবান্ন উৎসব ১৪৩২’। গতকাল বিকাল ৪টায় সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধন হয়। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লেখক, শিল্পী ও সুধীজনরা।
বক্তারা বলেন, নবান্ন শুধু মৌসুমি উৎসব নয়, এটি পরিশ্রমী মানুষের জীবনচেতনা ও বাংলার সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন ফারহানা করিম তন্ত্রা, মনুসংহিতা, দেবশর্মা ও মুক্তা ঠাকুর।
লোকসংগীত পরিবেশন করেন সাগর বাউল। কবিতা আবৃত্তি করেন ইসমত শিল্পী, সানাউল্লাহ সাগর, রকিব লিখন, নোমান রহমান, রাসেল রায়হান, মাসুম আওয়াল, মাহবুবা ফারুক প্রমুখ।