জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শেখ সায়েরা মেহজাবিন। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় ২২ শতাংশ পুড়ে গেছে তৃতীয় শ্রেণির এ শিক্ষার্থীর। ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষমাণ তার মা শারমিন ইয়াসমিন সুরভি বলেন, ‘ড্রেসিংয়ের সময় মেয়েটা চিৎকার করে কান্না করে। পরিবার, আত্মীয়স্বজন সবাইকে দেখতে চায়। প্রায় দিনই আত্মীয়স্বজন সায়েরাকে দেখার জন্য আসে। কিন্তু ইনফেকশনের ভয়ে আমরা খুব একটা ওর কাছে যাই না। চিকিৎসকরা বলেছেন, আগুনে পোড়া রোগীর ইনফেকশন হলে বিপদ। শুধু আমার মেয়েই না, ওখানে আরও অনেক শিশু চিকিৎসাধীন। এ পরিস্থিতিতে আবেগের চেয়ে ওদের সুস্থতা বেশি জরুরি।’ জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ৩৩ জন চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ২৭ জনই শিশু। হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন বলেন, বর্তমানে সংকটাপন্ন অবস্থায় তিনজন রোগী নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রয়েছেন। এ ছাড়া আশঙ্কাজনক অবস্থায় আটজন এবং ১৯ জন কেবিনে ও বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। তিনি আরও বলেন, আগুনে পোড়া রোগীদের ইনফেকশনের ঝুঁকি অনেক বেশি। এর মধ্যে অনেক রোগীর অপারেশন, স্কিন প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। অনেকে বেশি দগ্ধ হয়েছে- এমন রোগীদের অপারেশনের পরও দীর্ঘদিন ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। তাই ইনফেকশন হলে বিপদ আরও বাড়ে। এসব রোগীর ইনফেকশন ব্যবস্থাপনায় জোর দেওয়া হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি বেশি থাকে। শিশুদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, ‘কারও শরীরে ইনফেকশন হলে এক শতাংশ বার্ন থাকলেও তা অনেক ঝুঁকির। ইনফেকশন যদি একবার ঢোকে তাহলে এ চিকিৎসাব্যবস্থাপনা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সারা বিশ্বেই আগুনে পোড়া রোগীদের জন্য ইনফেকশন একটি বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। আমাদের দেশে তা আরও বেশি, কারণ কেউ আইন মানে না। মাইলস্টোনের ঘটনায় প্রথম দিন ৬০ জন রোগীর বিপরীতে যেখানে দুজন বা চারজন করে অভিভাবকসহ ২০০-২৫০ জন মানুষ থাকার কথা সেখানে কয়েক হাজার মানুষ এসেছিলেন হাসপাতালে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের শরীরের চামড়া হলো প্রথম প্রতিরোধক। সীমান্তে যদি সীমান্ত রক্ষী না থাকে তাহলে যেমন শত্রু বিনা বাধায় ভিতরে ঢুকবে তেমন ইনফেকশনও শরীরের ক্ষতি করে। ইনফেকশন চোখে দেখা যায় না। এটি তিন থেকে চার দিন পর দৃশ্যমান হয়। তখন দেখা যায় কোনো অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বার্ন ইনস্টিটিউটের এক চিকিৎসক বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় যাদের দগ্ধ হওয়ার পরিমাণ কম তাদেরও ইনফেকশনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। যেসব রোগীর কেবিনে দেওয়া হয়েছে সেখানে সাত আটজন করে মানুষ বসে থাকছেন। রোগীর স্বজনরা চিকিৎসকদের নিষেধ মানছে না। ফলে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়ছে।
মাইলস্টোনে মেডিকেল ক্যাম্প : মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় যেসব শিক্ষার্থী মানসিক ট্রমায় ভুগছে, তাদের কাউন্সেলিং সেন্টারে নিয়ে আসছেন অভিভাবকেরা। শিক্ষার্থীদের মানসিক ট্রমা থেকে বের করে আনতে নেওয়া হয়েছে এ উদ্যোগ। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা কাছ থেকে দেখা অভিভাবকরাও নিচ্ছেন কাউন্সেলিং। গতকাল উত্তরা দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে। গত সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ ক্যাম্প এক সপ্তাহ চলবে বলে জানা গেছে। বিমানবাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি দল এ মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে ক্যাম্পটি। তিন দফা পেছানোর পর আগামী ৩ আগস্ট থেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ক্লাস শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।