নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। কয়েকটি নদনদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলসহ কয়েকটি জেলায় আবারও বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি নদীতে আগামী দুই দিনের মধ্যে পানি সতর্কসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে দেশের নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামে সাময়িক বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে দেশের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও চট্টগ্রাম বিভাগের মুহুরী, হালদা, গোমতী, ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরও এক দিন পর্যন্ত এসব নদীর অববাহিকায় ভারী থেকে অতিভারী এবং দ্বিতীয় দিনে মাঝারি-ভারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে এসব নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। ফেনী জেলার মুহুরী নদী আগামী এক দিনের মধ্যে সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। সূত্র জানায়, টানা বৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধি এবং নিম্নচাপজনিত জলোচ্ছ্বাসের কারণে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকায় সাময়িক বন্যা পরিস্থিতির শঙ্কা আছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেট জেলার সারিগোয়াইন, সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও নেত্রকোনার সোমেশ্বরী নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানিও বাড়ছে এবং আগামী দুই দিন পর্যন্ত তা বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তা নদীর পানি বর্তমানে কমছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও হ্রাস পাচ্ছে এবং আগামী চার দিন পর্যন্ত তা স্থিতিশীল থেকে বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপ বর্তমানে ভারতের স্থলভাগে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি এবং নদীর তীরবর্তী এলাকায় এক থেকে তিন ফুট বেশি জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা রয়েছে।
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে জনদুর্ভোগ। নোয়াখালী পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড এখনো জলাবদ্ধতায় রয়েছে। হরিনারায়ণপুর, মধুপুর, গোপাই ও আল ফারুক স্কুল সড়ক, হাউজিং ও স্টেডিয়ামপাড়াসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি না হলে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ছোট ফেনী নদীর পানি প্রবেশ করে সোনাগাজী উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, শনিবার সন্ধ্যার পর স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবেশ করায় নদীতীরবর্তী সায়েদপুর, চর ইঞ্জুমান, মাদরাসাপাড়া, আমতলী, ইতালি মার্কেট, রহমতপুর, তেল্লারঘাট, কাজীরহাটসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল পাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, টিউবওয়েল, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির ঘর সম্পূর্ণভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, বর্ষণের কারণে প্রায় প্রতিদিন বাড়ছে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের পানি। বর্তমানে রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী হ্রদে ১০৪.২২ মিনস সি লেভেল পানি রয়েছে। তাই রাঙামাটি কাপ্তাই কর্ণফুলী জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট সচল আছে। এসব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ২২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।
কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা। দুই দিনে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলীসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ঢেউয়ের তোড়ে ভেঙে গেছে টুরিস্ট পুলিশের অস্থায়ী স্থাপনা। উপড়ে গেছে সৈকতের দৃষ্টিনন্দন ঝাউগাছ। জোয়ারের আঘাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডে আবারও ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ অংশ এবং উখিয়ার পাটুয়ারটেক এলাকায় এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
নিম্নচাপ পরিণত সুস্পষ্ট লঘুচাপে চার বিভাগে ভারী বৃষ্টির আভাস : দেশের চার বিভাগে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। এদিকে ভারতের ঝাড়খণ্ড এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ রূপে মধ্যপ্রদেশে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
গতকাল আবহাওয়ার সবশেষ পরিস্থিতি সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সমুদ্র বন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, আজ সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।