বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে ছোট ফেনী নদীর পানি প্রবেশ করে সোনাগাজী উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বহু ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। প্লাবিত এলাকায় বসবাসরত মানুষের দাবি— “আমরা চাই স্থায়ী সমাধান, নিরাপদ জীবন।”
সরেজমিনে দেখা যায়, শনিবার সন্ধ্যার পর স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় নদীর পানি প্রবেশ করায় নদীতীরবর্তী সায়েদপুর, চর ইঞ্জুমান, মাদ্রাসা পাড়া, আমতলী, ইতালি মার্কেট, রহমতপুর, তেল্লার ঘাট, কাজীর হাটসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানি বাড়তে বাড়তে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, পুকুর, টিউবওয়েল, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির ঘর সম্পূর্ণভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল সিদ্দিকী বলেন, মুছাপুর রেগুলেটরি না থাকায় প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। তবে শনিবারের জোয়ার ছিল অস্বাভাবিক। আগে কখনো এমনটা হয়নি। অন্য এক বাসিন্দা মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙে যাওয়ার পর থেকেই বর্ষার আগেই জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করে। ক্ষতির আশঙ্কার কথা বললেও কেউ কর্ণপাত করেনি।
এদিকে মাছচাষি সজিব রায়হান ও কৃষি উদ্যোক্তা আবু সায়েদ রুবেল জানান, প্রতিনিয়ত জোয়ারের লোনাপানি ঢুকে পড়ায় কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের অনেকেই এখন আর চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।” বর্ষায় পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মাছের ঘের ও ফসিল জমিতে চাষাবাদ করলে ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু হবে না।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পুর) মো. আবু মুসা রকি বলেন, আমরা হুগলি স্লুইস গেটসহ প্লাবিত অঞ্চলগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। সেখানে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.১৪৬ মিটার। অমাবস্যায় এমনিতেই পানি বাড়ে, তার ওপর রেগুলেটর না থাকায় সাগরের উত্তাল পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। এজন্য নিম্নাঞ্চলের যেসব বাড়িঘর রয়েছে সেগুলোতে পানি জমেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, জোয়ারের পানি নদী হয়ে খালে প্রবেশ করে চরদরবেশ, চরছান্দিয়া, বগাদানা ও চরমজলিশপুর এলাকার কৃষিজমি প্লাবিত করছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি—এইসব এলাকায় চাষাবাদ না করে উঁচু জমিতে ফসল করতে। জেলা কৃষি বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি সমাধানে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম