১৯৮০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গত ৪৪ বছরে ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বেড়েছে ৭ গুণ। ভূমির তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হারিয়ে গেছে ঢাকার ৬০ শতাংশ জলাধার। অবশিষ্ট জলাধার এখন মাত্র ৪.৮ শতাংশ এলাকায়। ২১.৬ শতাংশ ঢাকার সবুজ আচ্ছাদন কমতে কমতে নেমেছে মাত্র ১১.৬ শতাংশে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর আদাবর, রামপুরা, কাফরুল, বংশাল ও ওয়ারী এলাকায় গাছ নেই বললেই চলে।
জলশূন্য ঢাকার সূত্রাপুর, মিরপুর, গেন্ডারিয়া, কাফরুল এলাকা। ঢাকার হটস্পট শ্যামপুর, হাজারীবাগ, তেজগাঁও, রামপুরা ও দারুসসালাম। ঢাকার ৫০ থানার ৩৭টিতেই অতিক্রম করেছে নিরাপদ নির্মাণসীমা। রাজধানী ঢাকা ভয়াবহ পরিবেশগত সংকটের মুখে- এমন সতর্কতা উঠে এসেছে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ প্রকাশিত এক নতুন গবেষণা ‘প্রকৃতিবিহীন ঢাকা? প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক টেকসই নগর ভাবনার পুনর্বিচার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। গতকাল সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘হলিডে ইন’ হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা ঢাকাকে ৭ গুণ নগর বিস্তার, ৬০ শতাংশ জলাধার হারানো ও ৫ ডিগ্রি উত্তাপ ঠেকাতে প্রয়োজন প্রকৃতির অধিকার ও প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসনব্যবস্থা। ঢাকাকে রক্ষা করতে হলে প্রকৃতির অধিকার আইনগতভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে এবং প্রাকৃতিক অধিকারভিত্তিক শাসনব্যবস্থা অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। ঢাকায় অন্তত ৯ বর্গমিটার গাছপালা ও ৪.৫ বর্গমিটার জলাধার সংরক্ষণ করা গেলে কমবে ১.০১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। গত ৪৪ বছরের স্যাটেলাইট চিত্র ও নগর তাপমাত্রা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তৈরি এই গবেষণায় ঢাকার পরিবেশগত অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রধানত অব্যবস্থাপনায় ভরা, অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণই এই সংকটের মূল কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি শুধু নগর পরিকল্পনার ব্যর্থতা নয়, এটি এক ধরনের পরিবেশগত অবিচার এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জীবন ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। নগর নয়, এবার প্রকৃতির অধিকার নিশ্চিত করাই হোক ঢাকার টেকসই ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি, বলছে সংস্থাটি। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম. জাকির হোসেন খান, সহায়তা করেছেন সাবরিন সুলতানা ও মো. ফুয়াদ হাসান।