বিএনপি ২০২৪ সালের অর্থিক বছরের (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর) অডিট রিপোর্ট জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। গতকাল দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ইসি সচিব আখতার আহমেদের কাছে এই হিসাব বিবরণী জমা দেন।
পরে রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানান, ২০২৪ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২০ টাকা। দলের হিসাবে জমা আছে ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা। ২০২৩ সালে বিএনপির আয় ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। এ সময় বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে নির্বাচন সম্ভব কি না কিংবা ভোট বানচালের শঙ্কা করছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, যারা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছিল, সেই সব দোসররা তো বসে নেই। তারা নানাভাবে, নানা কায়দায় চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এসব বিষয়গুলোকে আইডেন্টিফাই করে যাতে কোনো রকমে নির্বাচনবিরোধী কোনো শক্তি কোনো ধরনের চক্রান্ত যাতে করতে না পারে, সেটা তো দেখার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। তারা সে কাজটি করবেন। যে সময় রয়েছে, সে সময়ের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবেন। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনের যে স্বাধীনতা, যে অধিকার- যেটা দেওয়া আছে, সেই অধিকার দিয়ে, সেই স্বাধীন বিধানগুলো প্রয়োগ করে নির্বাচনকে বানচাল করার অথবা নির্বাচনকে নিয়ে যে কোনো গভীর ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে সাহসী ভূমিকা রাখবে বলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিশ্বাস করে। তিনি আরও বলেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এখনো আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। ভোটের প্রত্যাশিত পরিবেশ এখনো হয়নি। নির্বাচনি পরিবেশ যাতে নির্বিঘ্ন হয়, সেজন্য উদ্যোগী হতে সরকার ও ইসির প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা বলেছি- সবসময়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দলগুলোর সমর্থন আস্থা রয়েছে। সে আস্থার সঠিক ও ইতিবাচক কাজ প্রদর্শন করবেন- যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। যাতে কোনো ভোটার ভয় না পায়, ভোটে কেন্দ্রে গেলে আশঙ্কা, ভয়ভীতি থাকতে পারে- এসব নিরসন করার দায়িত্ব সরকারের। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন কমিশনকে সরকারের অনুগত ও শেখ হাসিনার পদলেহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিল। আমাদের প্রত্যাশা বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি, দেশের মানুষের প্রত্যাশা জনগণের প্রত্যাশা- বর্তমান নির্বাচন কমিশন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে এবং অবাধ সুষ্ঠু, ইনক্লুসিভ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য যাবতীয় যে কাজগুলো করা দরকার, সেই কাজগুলো তারা করবেন। আয় বেড়েছে বিএনপির অডিট রিপোর্ট ইসিতে জমা : ইসিতে জমা দেওয়া বিএনপির অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮৪২ টাকা। যা আগের বছরের আয়ের চেয়ে ১ হাজার ৩১৩ শতাংশ বেশি। এ সময় দলটির ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৮০ লাখ ৪ হাজার ৮২০ টাকা। দলের হিসাবে জমা আছে ১০ কোটি ৮৫ লাখ ৯০ হাজার ১৯ টাকা। ২০২৩ সালে বিএনপি আয় ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ১৫১ টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৭০ টাকা। ২০২২ সালে বিএনপির আয় ছিল ৫ কোটি ৯২ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ টাকা। ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৩ টাকা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতি বছর জুলাইয়ের মধ্যে আগের পঞ্জিকা বছরের আর্থিক লেনদেনের প্রতিবেদন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ (নিবন্ধন স্থগিত) ছাড়া ৫০টি নিবন্ধিত দলকে অডিট রিপোর্ট দিতে চিঠি দেয় ইসি।