প্রায় সব নদনদীর পানি বাড়তে থাকায় সংলগ্ন অঞ্চলজুড়ে বন্যা আতঙ্ক তীব্র হয়েছে। এরই মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে। পবিত্র ঈদুল আজহার আনন্দের মধ্যেই হানা দিল বন্যা। দুর্ভোগে পড়েছে বহু মানুষ। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
গাইবান্ধা : থেমে থেমে বৃষ্টি ও উজানের ঢলে গাইবান্ধার সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে জেলার ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট নদ এবং তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এখনো বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ও ঘাগোয়া, ফুলছড়ি উপজেলার এরান্ডাবাড়ী ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ও হরিপুর ইউনিয়নের মানুষের মাঝে বন্যা অতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল ৯টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নিয়ন্ত্রণকক্ষের তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ফুলছড়ি স্টেশনে ৭৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে ঘাঘটের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ স্টেশনে ৫৮, করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর স্টেশনে ২৫ এবং তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন কাউনিয়া স্টেশনে ২১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
নেত্রকোনা : কয়েক দিনের টানা বর্ষণে জেলার সব নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও সোমেশ্বরীসহ প্রধান নদনদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নেত্রকোনার প্রায় সব কটি উপজেলায় গেল চার দিনে হালকা, মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৭৯ দশমিক ২ মিলিমিটার। ফলে সোমেশ্বরী ছাড়াও উব্দাখালী, মগড়া নদী এবং কংস ও ধনু নদের পানি বেড়েছে। তবে বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়ায় টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। নতুন করে আরও কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট, কৃষিজমি, পুকুর-জলাশয়। আখাউড়া স্থলবন্দরের শুল্ক এবং ইমিগ্রেশন অফিসের সামনের চত্বরে পানি প্রবেশ করেছে। স্থলবন্দর নিকটবর্তী আখাউড়া-আগরতলা আন্তর্জাতিক সড়কের প্রায় ১০০ মিটার জুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ শতাধিক পরিবার।
আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) মাহমুদুল হাসান বলেন, বন্যায় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। সকালে ছয়টি ট্রাকে প্রায় ২৫ মেট্রিক টন মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম রাশেদুল ইসলাম বলেন, গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত তথ্য-১৮-১৯টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ৪৫০টি পরিবার পানিবন্দি আছে। ১১টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০ জন আশ্রয় নিয়েছে।
সিলেট : বৃষ্টিপাত কিছুটা কমলেও উজানের ঢলে প্রবল স্রোতের তোড়ে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায়। রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিভিন্ন এলাকায় নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ (ডাইক) ভেঙে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। সকাল হওয়ার আগে অন্তত চার থেকে পাঁচটি স্থানে ডাইকে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দেয়। এ ছাড়া অসংখ্য স্থানে ডাইক উপচে পানি প্রবেশ করে। এতে প্লাবিত হয় বিভিন্ন গ্রাম, হাটবাজার ও বসতবাড়ি। জকিগঞ্জ পৌর শহরের বাজারে হাঁটুসমান পানি ওঠায় বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে সিলেটের আবহাওয়া অফিস। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গত কয়েকদিনের তুলনায় বৃষ্টিপাত অনেকাংশে কমে গেছে।
তবে সিলেটে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন।