গত বছরের জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে পঙ্গু বগুড়ার শফিকুল ইসলাম রতন দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকার ধাপগ্রামের মৃত ইলিয়াস উদ্দিন আকন্দের ছেলে শফিকুল ইসলাম রতন ২০০৩ সালে যমুনার ভাঙনে গৃহহারা হয়েছেন। নদীভাঙনে নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়ে পড়াশোনা ছেড়ে রাজধানীতে পাড়ি জমান। অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৬ জুলাই সকালে শহীদ আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর সারা দেশে যখন আন্দোলন বেগবান হয়, সেদিন বিকালে মিছিলে যোগ দেন শফিকুল ইসলাম রতন। সাড়ে ৪টার দিকে গাজীপুরের শফিপুর এলাকায় যখন মিছিল বের করা হয়, তখন পুলিশ মিছিলে গুলি চালায়। এতে একজন ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। পুলিশ গুলি শুরু করলে সবার সঙ্গে রতনও দৌড় দেয়। তখন পেছন থেকে গুলি করে পুলিশ। গুলিটি রতনের ডান পায়ে পেছন থেকে বিদ্ধ হয়ে বের হয়ে যায়। এতে রতন ছিটকে পড়ে। এ সময় তার ডান হাতে লোহার একটি অ্যাঙ্গেল ঢুকে যায়। এরপর স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তিনি কোনো চিকিৎসা পাননি। পরে তাকে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পঙ্গু হাসপাতালে কিছুটা সুস্থ হলে তাকে সারিয়াকান্দির বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ অনুভব করলে তাকে পুনরায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার পায়ে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে। পরে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তার ডান পা কেটে ফেলে দেওয়া হয়। ফলে পঙ্গু হয়ে যায় জুলাই যোদ্ধা শফিকুল ইসলাম রতন। একটি ব্যাংকের সহায়তায় তিনি কৃত্রিম পা পেয়েছেন। রতনের বড় মেয়ে সুস্মিতা আক্তার বগুড়া সৈয়দ আহম্মেদ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের মনোবিজ্ঞান বিষয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার ছোট মেয়ে মরিয়ম আক্তার সারিয়াকান্দি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি পা হারিয়ে উপার্জনে অক্ষম হওয়ায় পড়াশোনা বন্ধের পথে রতনের মেয়েদের।
নিজের পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে তিনি তার মেয়ের সরকারের কাছে একটি চাকরি চেয়েছেন; যাতে পরিবারের ভরণপোষণ করতে পারেন।