রাজধানীর খিলগাঁও উড়ালসড়কের মুখ থেকে শুরু করে নন্দীপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটি (এটি বাসাবো-মাদারটেক সড়ক নামে পরিচিত) খানাখন্দে ভরা। কোথাও বড় বড় গর্ত। আবার কোথাও ছোট ছোট। তবে যেসব স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, সেগুলোর অনেক স্থানে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর বৃষ্টিতে পানি জমে থাকার কারণে অনেক স্থানে ইট উঠে গেছে। এসব ছোট-বড় গর্তে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও থ্রি-হুইলারগুলো মাঝেমধ্যে উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়াও রাস্তা ভাঙাচোরা হওয়ার কারণে দিনভর এই পথে যানজট লেগেই থাকে। সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে।
সড়কটিতে চলাচল করা ব্যাটারি রিকশাচালক হাসানুল ইসলাম বলেন, মাদারটেক থেকে খিলগাঁও উড়ালসড়কের গোড়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা। রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। সড়কের এই অবস্থা এক বছর হয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষ এই বিষয়টা নিয়ে একেবারে উদাসীন। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে যাচ্ছে। আবার কোনো গাড়ি বিকল হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে বড় বড় গর্তগুলোতে কিছু ইট দিয়েছিল, সেগুলো আবার উঠে গেছে। মূল কথা, এই সড়ক চলাচলের জন্য একেবারেই অনুপযোগী।
শুধু রাজধানীর এই সড়কটি নয়, ঢাকার মুগদা বিশ্বরোড এলাকার অতীশ দীপঙ্কর সড়ক থেকে মান্ডা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার, সম্প্রসারণ ও ড্রেন নির্মাণের কাজ দেড় বছর আগে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। ইট, বালু, খোয়া আর কংক্রিটের পাইপ পড়ে আছে দিনের পর দিন। সড়কটি খুঁড়ে রাখায় সে পথে চলতে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃষ্টি হলে দুর্ভোগ বেড়ে যায় আরও। একই অবস্থা দয়াগঞ্জ মোড় থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত গেন্ডারিয়া নতুন সড়কটি প্রথম দেখায় মনে হতে পারে যেন খালে অথৈ পানি। সড়কের জায়গায় জায়গায় গর্তের আকার এত বড় যে, সামান্য বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় কয়েক ফুট পানির নিচে। ভাঙা সড়কের মাঝেই জলাবদ্ধতা থাকে কয়েক দিন। অবস্থা এমন যে, হেঁটে চলারও সুযোগ নেই।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন মূল সড়ক থেকে শুরু করে অনেক আবাসিক এলাকাজুড়ে বিভিন্ন সড়কের করুণ দশা। সর্বত্র এবড়োখেবড়ো আর খানাখন্দে ভরা। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় অনেক সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় পিচ উঠে গেছে, কোথাও তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রাস্তা উন্নয়নের নামে খনন করে ফেলে রাখা হয়েছে মাসের পর মাস। কোনো কোনো রাস্তার সংস্কারকাজ বন্ধ রয়েছে তারও বেশি সময় ধরে। সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করায় নাগরিক দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। অনেক সড়কে যানচলাচলও বন্ধ। কিছু সড়কে হেঁটে চলারও সুযোগ নেই। মাঝেমধ্যে ইট-সুরকি বিছিয়ে অস্থায়ীভাবে মেরামতের চেষ্টা হলেও দুর্ভোগ কমছে না। বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় উঠে গেছে সড়কের বিটুমিন, ইট-সুরকিও। ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে কোনোমতে চলছে যানবাহন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌচাক, মানিকনগর, টিটিপাড়া, গোপীবাগ, মালিবাগ, রাজারবাগ, সায়েদাবাদ, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, টিকাটুলী, নারিন্দা, দয়াগঞ্জ, কমলাপুর, খিলগাঁও এবং পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ভাটারা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, নাছিরাবাদ, মোহাম্মদপুর, রাজাবাজার, মিরপুর, নতুন বাজার ১০০ ফিট সড়কসহ নগরীর অধিকাংশ অলিগলির সড়কের বেহাল অবস্থা। কোনোটা বছরখানেক সময় ধরে, আবার কোনোটা হয়তো কয়েক মাস ধরে পড়ে আছে একই রকম বেহাল অবস্থায়। সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১ হাজার ৬৫৬ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে গত বর্ষায় ২১৪ কিলোমিটার সড়ক এবং ২৭ কিলোমিটার ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় রয়েছে ১ হাজার ৫৭৭ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার সড়ক। এর মধ্যে ১৫০ কিলোমিটার সড়ক গত বর্ষায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে মেরামত করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন সংস্থা দুটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে সড়ক সংস্কারের কাজ চলছে।
সড়ক মেরামত দুভাবে করা হয়। কোথাও ছোট গর্ত থাকলে সেটা তাৎক্ষণিক সংস্কার করা হয়, যা তিন দিনের বেশি সময় লাগে না। আবার বড় সংস্কারের প্রয়োজন হলে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে। এ ছাড়া অন্যান্য সংস্থারও কাজ চলছে। আশা করি খুব দ্রুতই কাজ শেষ হবে।