মহান আল্লাহ প্রদত্ত অফুরন্ত নিয়ামতের একটি হচ্ছে মাছ। এটি শুধু একটি সুস্বাদ খাদ্যই নয়, বরং মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। আধুনিক যুগে মাছ শুধু পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার নয়, বরং ওষুধ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যেও এটি অমূল্য সম্পদ। মহান আল্লাহর এই মহামূল্যবান নিয়ামতে মানুষের জন্য রয়েছে বহুবিধ উপকারিতা।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য; তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৫৬)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আর তিনিই সে সত্তা, যিনি সমুদ্রকে নিয়োজিত করেছেন, যাতে তোমরা তা থেকে তাজা (মাছের) গোশত খেতে পার এবং তা থেকে বের করতে পার অলংকারাদি, যা তোমরা পরিধান করো। আর তুমি তাতে নৌযান দেখবে তা পানি চিরে চলছে , যাতে তোমরা তার অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় করো।’
(সুরা : নাহাল, আয়াত : ১৪)
সত্যিই মহান আল্লাহর এই নিয়ামত, বান্দার জন্য তাঁর পক্ষ থেকে অনুগ্রহের নিদর্শন বৈ কিছু নয়।
কারণ একদিকে এই নিয়ামত থেকে মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে মহান আল্লাহ এই নিয়ামতের বর্জ্যের মধ্যেই এত অধিক পরিমাণ রহমত রেখেছেন, যা থেকে মানুষের নিত্যপ্রয়োজন পূরণের অনেক মূল্যবান উপকরণ তৈরি হচ্ছে।
এই যেমন মাছের আঁশের কথাই ধরা যাক, মানুষ সাধারণত এই জিনিসটি ফেলে দেয়, অথচ এই ফেলনা জিনিস রপ্তানি করে দেশের শত শত কোটি টাকা আয় হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, মাছের আঁশের বিশ্বব্যাপী নানা রকম ব্যবহার রয়েছে। মাছের আঁশে থাকে কোলাজেন, যা খাদ্য, ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিকস শিল্পে ব্যবহৃত হয়।
কোলাজেন নামের একটি পণ্য বিক্রি হয় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। চীন ও জাপানে এই আঁশ ব্যবহার করে বায়ো পাইজোইলেকট্রিক ন্যানো জেনারেটর তৈরি করা হয়, যেগুলো দ্বারা রিচার্জেবল ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া যায়। ঘরোয়া বিদ্যুৎ উৎপাদনেও এটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এ ছাড়া মাছের আঁশ ব্যাটারি তৈরি, বৈদ্যুতিক পণ্য, কৃত্রিম কর্নিয়া, মাছ ও পোলট্রি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। সুবহানাল্লাহ।
আবার মাছের তেল থেকে পাওয়া মূল্যবান ওমেগা থ্রি, যা জ্ঞানীয় স্বাস্থ্য, স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং বহু ধরনের রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। এমনিভাবে মাছের কলিজায়ও ভিটামিন এ, ডি ও ওমেগা থ্রিসহ বহু ভিটামিন পাওয়া যায়, যা মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। হাদিসের ভাষ্যমতে, মহান আল্লাহ জান্নাতিতের প্রথম আপ্যায়ন করবেন মাছের কলিজা দিয়ে। (মুসলিম, হাদিস : ৬০৩)
এভাবে মাছের চামড়াও মানুষের বহুবিধ উপকারে আসে। যেমন—ইদানীং বিশেষ পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছের চামড়া দিয়ে অগ্নিদগ্ধ রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে গবেষণা চলছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এমন যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ব্রাজিলের চিকিৎসকরা। মাছের চামড়া দিয়ে পোড়া রোগের ক্ষত সারানোর বিষয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নালেও গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হচ্ছে।
এগুলো ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ তাঁর এই সৃষ্টির মধ্যে কত রহস্য লুকিয়ে রেখেছেন। যেগুলো তাঁর মহত্ত্ব ও রাজত্বের বার্তা দিয়ে যায়।
আর মানবজাতিকে পবিত্র কোরআনের সেই আয়াত মনে করিয়ে দেয়, ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করোনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদের আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)