পদ্মা নদীর ভাঙনে আবার আতঙ্কে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবার মানুষ। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার জাজিরা প্রান্তে তীররক্ষা বাঁধে নতুন করে আরও ১০০ মিটারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার এ ভাঙন শুরু হয় মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারসংলগ্ন এলাকায়, গতকালও ভেঙেছে। এ কারণে আরও ১৫টি দোকানঘর সরিয়ে নিতে হয়েছে। নতুন করে ভাঙন শুরু হওয়ায় ভাঙনকবলিতরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিশাহারা। আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে বেড়াচ্ছেন।
জানা যায়, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে রয়েছে সেতুর সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, দক্ষিণ থানাসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। এসব রক্ষায় বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ভাটির দিকে ২ কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছিল, যা এখন ধসে পড়ার শঙ্কায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ১৭ দিনের ব্যবধানে জাজিরা প্রান্তের তীররক্ষা বাঁধের ৬৫০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। হঠাৎ ভাঙনে ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ১৫টি বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে আরও ৫০টি বসতঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অন্তত ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার ভাঙনঝুঁকির মুখে রয়েছে। মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, ‘বাঁধ থাকায় এতদিন আমরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পেরেছি। এখন প্রতিটি দোকানে আতঙ্ক। এরই মধ্যে ১৫টি দোকান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, আজ (শুক্রবার) আরও কিছু সরানো হবে।’জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, ‘পুরোনো বাঁধটি কিছুদিন ধরে ক্ষয়ে যাচ্ছিল। নতুন করে আবার ভাঙন দেখা দেওয়ায় আমরা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার তালিকা প্রস্তুত করছি।’ পানি উন্নয়ন বোর্ডের শরীয়তপুর জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, ‘নদীতে স্রোতের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ভাঙন তীব্রতর হচ্ছে। জিও ব্যাগ দিয়ে অস্থায়ীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে।’
চাপাইনবাবগঞ্জে বিলীন শতাধিক স্থাপনা, নির্ঘুম নদীপাড়ের মানুষ : পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারত ফারাক্কা ব্যারাজের প্রায় সবকটি গেট খুলে দেওয়ায় প্রবল স্রোতের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৪ কিমি এলাকাজুড়ে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নদী ভাঙনে সদর উপজেলার আলাতুলী ইউনিয়নের কোদালকাটি ও পোলাডাঙ্গা বিওপি এলাকায় শতাধিক ঘরবাড়ি, বসতভিটা, ফসলি জমি, মসজিদসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছে পোলাডাঙ্গা বিজিবি ক্যাম্প-বিওপি। বিওপি থেকে মাত্র ৪ মিটার দূরে ভাঙন অবস্থান করছে। ফলে সীমান্ত সুরক্ষা রাখতে বালুর বস্তা ও টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অন্যদিকে সদর উপজেলার নারায়ণপুর ও শিবগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর ও পাঁকা ইউনিয়নে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন এবং পদ্মার ভাঙন থেকে বাঁচতে অনেকেই ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। নারায়ণপুর ইউনিয়ন কমপ্লেক্সটির খুব কাছে নদী প্রবাহিত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে- এটিও যে কোনো সময় নদীতে তলিয়ে যাবে। নারায়ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন জানান, ইতোমধ্যে ইউনিয়নের ১, ৩ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শতাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, গাছপালাসহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরও ১ হাজার ঘরবাড়ি। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, পোলাডাঙ্গা বিওপিসহ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১৪ কিমি এলাকা ভাঙনের মুখে রয়েছে। ফলে পোলাডাঙ্গা বিওপি ও মনোহরপুর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও জিও টিউব দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে কাজ শুরু হয়েছে।