পাবলিক পরীক্ষার আদলে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না এবারও। চলতি বছর অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হচ্ছে ১৩ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া বৃত্তি পরীক্ষা পদ্ধতি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয় নিয়ে সম্প্রতি একটি সভাও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আর শিক্ষা বোর্ডগুলো নাকি শিক্ষা অধিদপ্তর এ বৃত্তি পরীক্ষার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে খুব শিগগিরই এ বিষয়ে বৈঠক করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তথ্যমতে, অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা ফের চালু করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ২০ জুলাই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা এই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা পুনঃপ্রবর্তন নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। জানা গেছে, এর আগে সর্বশেষ ২০০৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পরীক্ষা নিয়েছিল সরকার। এরপরে অষ্টম শ্রেণিতে চালু করা হয়েছিল জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা। পাবলিক পরীক্ষার আদলে এই পরীক্ষা নেওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের বেড়েছিল কোচিং নির্ভরতা। জিপিএর ভিত্তিতে ফলাফল প্রকাশ করার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল অসুস্থ প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ সময় ধরেই অষ্টম শ্রেণিতে এই পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে সরব ছিলেন শিক্ষাবিদসহ অভিভাবকরাও। কিন্তু অনেকটা ‘গায়ের জোরেই’ বিতর্কিত জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা চালু রেখেছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। অব্যাহত সমালোচনার মুখে ২০২৩ সালে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না নিয়ে একই সিলেবাসের আদলে অষ্টম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষার নেয় তৎকালীন সরকার। ’২৪-এ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর গত বছরও হয়নি জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা। নেওয়া হয়নি বৃত্তি পরীক্ষাও। চলতি বছর দীর্ঘ সময় পর অষ্টম শ্রেণিতে ফের চালু হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি পরীক্ষা পদ্ধতি।
সূত্র জানায়, এর আগে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া নির্দিষ্ট শতাংশের ছাত্র-ছাত্রীকে বৃত্তি পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হতো। বর্তমানে বৃত্তি পরীক্ষার নতুন নীতিমালা এখনো না থাকায় কত শতাংশ শিক্ষার্থীকে এ পরীক্ষায় বসতে হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম বদরুন নাহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাবলিক পরীক্ষার মতো আগের সিস্টেম থাকছে না। চলতি শিক্ষা বছর থেকে বৃত্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হচ্ছে, যেন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করা যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছর অষ্টম শ্রেণিতে ফের বৃত্তি পরীক্ষা চালু হচ্ছে। পূর্বে অনুসরণ করা পদ্ধতিতেই এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে নাকি নতুন কোনো পদ্ধতিতে পরীক্ষা হবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরীক্ষা পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, অতীতে পাবলিক পরীক্ষার আদলে জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা নেওয়া হতো। এ পরীক্ষা নিয়ে সারা দেশে ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকদের মধ্যে ছিল জিপিএ-৫ পাওয়ার তীব্র অসুস্থ প্রতিযোগিতা। অষ্টম শ্রেণীতে বৃত্তি পদ্ধতি চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, বিষয়টিকে সাধুবাদ জানাই।