ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা মিয়াবাড়ি মসজিদটি প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো। মসজিদটিতে রয়েছে অমূল্য বেশ কিছু নিদর্শন। যা দেখতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা আসেন। মসজিদটিতে সংরক্ষিত রয়েছে নাইট্রোজেন গ্যাসে ভরা কাচের জারে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র কেশ মোবারক, হজরত আলী (রা.)-এর গোঁফ, হজরত ইমাম হাসান (রা.) ও হোসাইন (রা.)-এর জুলফি (কানের দুই পাশের দাড়ির ওপরের অংশ) এবং বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর জোব্বা। হজরত শাহ আলী বোগদাদি (রহ.) ইরাক থেকে ভারত বর্ষে আসার সময় দু®প্রাপ্য কিছু সম্পদ সঙ্গে নিয়ে আসেন। সেই অমূল্য সম্পদগুলো এখন সংরক্ষিত রয়েছে ‘গেরদা মিয়াবাড়ি মসজিদ’-এ।
৪০০ বছর আগে নির্মিত এ মসজিদটি কালের বিবর্তনে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সেখানেই নির্মিত হয় দৃষ্টিনন্দন নতুন মসজিদ। মসজিদটিতে ব্যবহার করা হয়েছে পুরোনো ভবনের সুলতানি আমলের পাথর, গ্রানাইড পাথরের ফলক ও পিলার। রয়েছে মূল্যবান বেলে পাথর ও শিলালিপিও। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে শাহ আলী (রহ.) ৮১৩-১৪ হিজরিতে (১৪১২ খ্রিস্টাব্দে) বাগদাদ থেকে ৪০ জন মতান্তরে শতাধিক আত্মীয়-স্বজন, ধর্মীয় সাধক ও শিষ্যসহ দিল্লি হয়ে ফরিদপুরের (ফতেহাবাদ) গেরদাতে আসেন। স্থানীয়দের কাছে ঢোলসমুদ্র বলে খ্যাত নদী তীরবর্তী জঙ্গলময় স্থান গেরদা। পরবর্তীতে ঢাকার মিরপুরে আস্তানা স্থাপন করেন। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। মিরপুরে হজরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.)-এর মাজার অবস্থিত।
মসজিদটির বর্তমান নাম ‘ঐতিহ্যবাহী গেরদা মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ।’ জনশ্রুতি আছে, এখানে শাহ আলী বাগদাদী (রহ.) একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। তার মৃত্যুর পর সেই মসজিদের ভগ্নাবশেষের ওপর আরেকটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় হিজরি ১০১৩ সনের দিকে। কালের আবর্তনে সেই মসজিদটিও ধ্বংস হয়ে যায় নদীগর্ভে এবং স্থানটি ধীরে ধীরে জঙ্গলে ঢাকা পড়ে। দীর্ঘদিন পর নতুন মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এখনো পুরোনো ওই মসজিদের অখ পাথরের তৈরি পিলারসহ অনেক নিদর্শন অক্ষত রয়েছে। নতুন মসজিদের দুই প্রবেশপথে অখ পাথরের চারটি পিলারের অংশবিশেষ শোভা পাচ্ছে। এ ছাড়া মসজিদের আশপাশে পুরোনো মসজিদের ভাঙা ইট-পাথরের টুকরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। যা থেকে অনুমান করা চলে, এখানে একটি পুরোনো মসজিদ ছিল। এ ছাড়া নতুন মসজিদের প্রদর্শনী কক্ষের সামনে একটি পাথর ফলক লাগানো রয়েছে। ওই ফলকে লেখা রয়েছে, ১০১৩ হিজরি। এর দ্বারা অনুমান করা যায়, শাহ আলী বাগদাদী (রহ.)-এর মৃত্যুর পর এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিংবা হতে পারে হজরত শাহ আলীর আমলের মসজিদটি তখন সংস্কার করা হয়েছিল। নতুন মসজিদটির নির্মাণকাজ ১৯৭৮ সালে শুরু হয়। এই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর সৈয়দ আলী আহসান।
মসজিদটিতে থাকা ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো বছরে ৫ বার সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এসব বরকতময় জিনিস দেখতে আসেন। যে পাঁচ দিন জিনিসগুলো দেখানো হয় তা হলো, ১২ রবিউল আউয়াল, শবে মেরাজ, ১১ রবিউস সানি ফাতেহা ইয়াজদাহম (গাউসুল আজম বড় পীর হজরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর মৃত্যু দিবস), ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিন।
এ ছাড়া বিশেষ কেউ আসলে কিংবা আগে থেকে মসজিদ কর্তৃপক্ষের অনুমতিসাপেক্ষে স্মৃতিবহ জিনিসপত্রগুলো দেখার সুযোগ মেলে।