যুক্তরাষ্ট্র এখনো আশা করছে যে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের ব্যাপক যুদ্ধের মধ্যেও আলোচিত যুদ্ধবিরতি আসন্ন সপ্তাহগুলোর মধ্যেই চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। তবে উভয়পক্ষই এখনো আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে এবং আসন্ন আলোচনার আগে ক্রেমলিন যে শান্তিচুক্তির ব্যাপারে তেমন আগ্রহী নয়, তারও ইঙ্গিত মিলছে। গতকাল এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য জানিয়েছে আল-আরাবিয়্যা। প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২০ এপ্রিলের মধ্যে মস্কো-কিয়েভ যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে কাজ করছে হোয়াইট হাউস। যে দিনটি আবার চলতি বছরে পশ্চিমা ও অর্থডক্স চার্চ উভয়ের ইস্টার উদযাপনের দিন। তবে যেহেতু দুই পক্ষের অবস্থানের মধ্যে বড় ফারাক রয়েছে, তাই সময়সীমা পিছিয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধ সমাপ্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদিও অগ্রগতি এখনো সীমিত। মার্কিন কর্মকর্তারা আগামী দিনে সৌদি আরবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন। যা রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রথম সপ্তাহগুলোর পর প্রথমবারের ঘটনা হবে।
যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা কিছুটা সফল- ট্রাম্প : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তেজনা আরও বাড়ানো থেকে বিরত রাখার চেষ্টা ‘কিছুটা সফল’ হয়েছে। শনিবার তিনি জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং যুক্তিসঙ্গত আলোচনার মাধ্যমেই এই যুদ্ধের সমাধান সম্ভব।
স্পোর্টস ওয়েবসাইট আউটকিকের প্রতিষ্ঠাতা ক্লে ট্র্যাভিসের সঙ্গে এয়ার ফোর্স ওয়ানে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এ কথা বলেন। গত সপ্তাহে তিনি পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে পৃথক আলোচনায় বসেন। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে ব্যাপক আক্রমণ চালানোর পর থেকে এই যুদ্ধ শুরু হয়। ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল ৩০ দিনের সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি অর্জন করা। যদিও তা পুরোপুরি সফল হয়নি, তবে পুতিন ৩০ দিনের জন্য ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ করতে সম্মত হয়েছেন। জেলেনস্কিও এই বিরতিতে সম্মতি জানিয়েছেন।
-আল-আরাবিয়া, বিসিসি
রাশিয়ার শর্ত ও ইউক্রেনের আপত্তি : এদিকে রাশিয়া যে কোনো চুক্তির জন্য কঠোর শর্ত দিয়েছে। যার মধ্যে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার দাবি অন্তর্ভুক্ত। তবে কিয়েভ ও তার মিত্ররা এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার দাবি মেনে হোয়াইট হাউস অস্থায়ীভাবে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করলেও এখনো কোনো স্থায়ী সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। এ অবস্থায় ইউরোপীয় কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ট্রাম্প কূটনৈতিক সাফল্যের লক্ষ্যে ইউক্রেনের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে পারেন। তাদের মতে, পুতিন আলোচনায় দেরি করিয়ে ট্রাম্পের কাছ থেকে আরও ফায়দা আদায়ের চেষ্টা করছেন। রয়টার্স, আল আরাবিয়া
স্টারমারের প্রস্তাবকে খারিজ করলেন ট্রাম্পের প্রতিনিধি
ইউক্রেনকে সমর্থন দিতে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। তার এই পরিকল্পনাকে লোকদেখানো ও অতি সরলীকৃত প্রস্তাব বলে কটাক্ষ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ।
ট্রাম্পপন্থি সাংবাদিক টাকার কার্লসনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, যুদ্ধপরবর্তী ইউক্রেনে সামরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগ্রহীদের নিয়ে একটি জোট গঠনের প্রস্তাব করেছেন স্টারমার। আমি তো মনে করি, এটা অনেকটাই লোকদেখানো পরিকল্পনা, যা খুব বেশি বাস্তবতার বিবেচনায় তৈরি করা হয়নি। তিনি আরও বলেছেন, ইউরোপের নেতারা মনে করছেন, রাশিয়া পুরো ইউরোপ দখল করে নেবে। পুরো বিষয়টিই হাস্যকর। (ইউরোপ রক্ষার্থে) সবার মধ্যেই উইনস্টন চার্চিল (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী) হতে চাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তবে এখন ন্যাটো আছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ছিল না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে সমঝোতার নেতৃত্বে রয়েছেন উইটকফ। -বিবিসি