আমেরিকা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা থেকে ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে নিউইয়র্কভিত্তিক এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। এর বিনিময়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটির জব্দ করা অর্থ ফেরত দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে, বিষয়টি সম্বন্ধে অবগত কয়েক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে শুক্রবার এমনটাই জানিয়েছে এনবিসি নিউজ। ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের পরিকল্পনাটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের ‘গভীর বিবেচনায়’ রয়েছে এবং এনিয়ে লিবিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে, জানিয়েছেন পাঁচ কর্মকর্তা।
এক দশকেরও বেশি সময় আগে যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ার কয়েক শ বিলিয়ন ডলারের তহবিল জব্দ করেছিল, সেটি ছাড় করার বিনিময়ে তারা ফিলিস্তিনিদের দেশটিতে স্থানান্তরের কথা ভাবছে, ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনজন এনবিসিকে এমনটাই বলেছেন। সংবাদমাধ্যমটি বলছে, এনিয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সমঝোতা হয়নি, তবে লিবিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি ইসরায়েলকে অবহিত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা এ খবরকে ‘অসত্য’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন। ‘মাঠের এখন যা পরিস্থিতি তাতে এমন পরিকল্পনা মোটেও বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়নি, এবং এটা একেবারেই অর্থহীন,’ বলেছেন তিনি। গাজার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের লিবিয়ায় সরিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত কোনো আলোচনার ব্যাপারে তিনি অবগত নন। -এনবিসি নিউজ
‘ফিলিস্তিনিরা তাদের মাতৃভূমির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, তারা এই ভূমির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং নিজেদের জমি, পরিবার, সন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে ও যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। ‘গাজা ও গাজাবাসীসহ ফিলিস্তিনিদের নিয়ে কী হবে আর কী হবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র ফিলিস্তিনিদেরই রয়েছে,’ এনবিসিকে বলেছেন বাসেম নাইম। কাগজপত্রহীন লাখো অভিবাসনপ্রত্যাশীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার অঙ্গীকার করে জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেওয়া ট্রাম্প এখন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের লিবিয়াসহ তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন বলে চলতি মাসে একাধিক মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে খবর বেরিয়েছিল। তবে লিবিয়ার জাতীয় ঐক্য সরকার (জিএনইউ) তাদের না জানিয়ে বা তাদের সম্মতি ছাড়া বিতাড়িত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের গন্তব্য হিসেবে লিবিয়ার ভূখণ্ড ব্যবহারের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা হয়নি বলেও জানিয়েছে তারা। ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে ট্রাম্প বারবারই বলে আসছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর বা জর্ডানের মতো কাছাকাছি কোনো আরব দেশে স্থানান্তর করা উচিত। জর্ডান, মিসরের পাশাপাশি ফিলিস্তিনি নেতারাও এ ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রেরই গাজা ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া উচিত। তিনি গাজার প্রায় ২০ লাখ বাসিন্দাকে অঞ্চলটির অন্য কোনো দেশে সরিয়ে ভূখণ্ডটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’ বানানোর পরিকল্পনার কথাও সে সময়ই উচ্চারণ করেছিলেন।
এদিকে গাজায় হামাসকে পরাজিত করা এবং সেখানে থাকা ইসরায়েলি বাকি জিম্মিদের মুক্ত করতে বড় ধরনের একটি সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফ তাদের হিব্রু ভাষার পরিচালিত এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জানিয়েছে, তারা ‘অপারেশন গিডিয়ন্স চ্যারিওটস’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করছে। যার লক্ষ্য গাজার কৌশলগত এলাকার দখল নেওয়া। গাজায় হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত মার্চ মাস থেকে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় ইসরায়েল। শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘গাজায় অনেক মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।’ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের হিব্রু ভাষার অ্যাকাউন্ট থেকে যে পোস্টটি দিয়েছে, সেখানে এ অভিযানের একটি নাম দিলেও ইংরেজি ভাষার পোস্টে এ অভিযানের নাম ব্যবহার করেনি।