ভারতের মহারাষ্ট্রে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি সরানোর দাবিতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের বিক্ষোভের মধ্যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় নিন্দা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার স্পষ্ট মন্তব্য, ‘আমি কোনো সহিংসতাকেই সমর্থন করি না। এমনকি আমরা যখন রাজ্যে বিরোধী চেয়ারে ছিলাম তখনো কোনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে সমর্থন করিনি। আমার মনে পড়ে, যখন ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছিল, একটা বড় ধরনের দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি নিজে তখন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে (পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎকালীন সচিবালয়) যাই। তখন রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল। আমি তাদের আবেদন জানাই- আপনারা যদি কোনো পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন, সেটা আমাকে জানান, সে ক্ষেত্রে আমিও আপনাদের সাহায্য করতে পারি।’ গতকাল রাজ্য সরকারের সচিবালয় নবান্নে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ মন্তব্য করেন মমতা। নাগপুরের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মমতার পাল্টা জবাব, ‘মহারাষ্ট্রে যখন এ ধরনের ঘটনা ঘটছে, তখন উদ্ধব ঠাকরে, শরদ পাওয়ারের সেখানকার মতো বিরোধীদলের নেতাদের এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা উচিত, তারাই উত্তর দেবে।
কিন্তু আমি একটা কথাই বলতে চাই- সেটা হচ্ছে আমরা সবসময় একতার পক্ষে। কারণ, ভারত এমন একটা দেশ যেখানে বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য রয়েছে।’
মমতার অভিমত, ‘কঠিন সময়ে (Crisis period) ঝগড়া করা উচিত নয়। যখন কোনো সমস্যা (Crisis) তৈরি হয় তখন সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।’ উল্লেখ্য, মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সম্ভাজি নগর থেকে মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সমাধি অপসারণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংগঠন। এরই মধ্যে নাগপুরে একটি গুজবের জেরে গত সোমবার সন্ধ্যায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। নাগপুরের মহাল, কোতোয়ালি, চিতনিস পার্ক, গণেশপেঠ এবং শুক্রওয়ারি তালাওসহ বেশ কিছু এলাকায় সংঘর্ষের জেরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে শেল ছোড়ে এবং লাঠিপেটা করে। পাল্টা তাদের ওপর পাথর ছোড়া হয় এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নি সংযোগ ঘটানো হয়। ওই সহিংসতার ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। আটক করা হয় প্রায় অর্ধশতাধিক দাঙ্গাকারীকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জারি করা হয় কারফিউ। সহিংসতায় মদদ দেওয়ার অভিযোগে ঘটনার পরদিন মঙ্গলবারই মূল অভিযুক্ত মাইনোরিটিস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) ফাইম খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নাগপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসিপি) লোহিত মাদানি জানান, আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভিডিও সম্পাদনা করে প্রচার করেছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি (ফাহিম খান)। শুধু তাইই নয়, হিংসাত্মক ভিডিওগুলোকেও অতিরঞ্জিত করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে দুইটি সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে চারটি এফআইআর দায়ের করা হয়।