বিশ্বে অস্ত্র আমদানিতে শীর্ষে উঠে এসেছে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধরত ইউক্রেন। তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এশিয়ার দেশ ভারত। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) -এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে প্রতিবেদনটি দেখলে অবাক লাগতে পারে। বিশ্বে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ২০১০ থেকে ২০১৯-এর তুলনায় মোটের ওপর একই আছে। কিন্তু একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন বিশ্বের ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব ক্রেতাদের ওপর ভয়ংকরভাবে পড়েছে।
২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ইউক্রেন সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করেছে। তারা অস্ত্র আমদানির পরিমাণ অনেক গুণ বাড়িয়েছে। তারাই এখন অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে এক নম্বরে আছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে যে অস্ত্র রপ্তানি হয়েছে, তার ৯ শতাংশ হয়েছে ইউক্রেনে। তালিকায় দুই নম্বরে আছে ভারত। তবে ভারত অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমিয়েছে।
রাশিয়ার আগ্রাসন ও মার্কিন আশঙ্কা : এই একই সময়ে ইউরোপের দেশগুলোতে অস্ত্র কেনার পরিমাণ বেড়েছে ১৫ শতাংশ। এটাও ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সরাসরি প্রভাব। এসআইপিআরআই রিপোর্ট বলছে, মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে অনিশ্চয়তার ফলেও অস্ত্র কেনাবেচার পরিমাণ বেড়েছে। এই রিপোর্টের একজন লেখক ম্যাথু জর্জ বলেছেন, রাশিয়া আক্রমণ করতে পারে, এই ভয় থেকেই ইউরোপ বেশি করে অস্ত্র কিনছে।
এর আগে যারা সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করত সেই সৌদি আরব, ভারত, চীন ওই সময়ের মধ্যে অস্ত্র কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদন বলছে, ৩৫টি দেশ ২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়েছে। তার মধ্যে ৪৫ শতাংশ অস্ত্র গেছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র থেকে। জার্মানি ১২ শতাংশ ও পোল্যান্ড ১১ শতাংশ অস্ত্র দিয়েছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন যদি ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউক্রেনের কতটা সমস্যা হবে। ২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে ইউক্রেনই হলো অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে প্রথম ১০-এ থাকা একমাত্র ইউরোপের দেশ। ইউরোপের অনেক দেশ অস্ত্র আমদানির পরিমাণ বাড়ালেও তালিকায় প্রথম ১০-এ নেই।
এসআইপিআরআই আর্মস ট্রান্সফার প্রোগ্রামের সিনিয়র গবেষক পিটার ওয়েজম্যান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। ইউরোপের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৫০০ যুদ্ধবিমান ও অন্য অস্ত্র কেনার বরাত দিয়ে রেখেছে।
অস্ত্র রপ্তানিতে এক নম্বরে যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্বে অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে। ২০২০ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে তারা ১০৭টি দেশকে অস্ত্র দিয়েছে। মোট অস্ত্র রপ্তানির ৪৩ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে হয়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফ্রান্সের তুলনায় তাদের অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ চার গুণেরও বেশি বলে ম্যাথিউ জর্জ জানিয়েছেন। ২০১৫ থেকে ২০২৪-এর মধ্যে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানির পরিমাণ ৬৩ শতাংশ কমেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালে তারা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম অস্ত্র বিক্রি করেছে। ওয়েজম্যান বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি অনেকটাই কমে গেছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে তারা অন্য দেশে অস্ত্র বিক্রি করতেও পারছে না। যদি কোনো দেশের সঙ্গে তারা অস্ত্র কেনাবেচা করতে পারে, তাহলে সেটা হলো চীন ও ভারত। -এসআইপিআরআই