দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া সরকারবিরোধী তীব্র বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের ভেতরেও সংসদ সদস্যদের জন্য বিশাল অঙ্কের মাসিক ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণাই আন্দোলনের সূচনা করে। পরবর্তীতে পুলিশের গাড়িচাপায় এক তরুণ ফুড ডেলিভারি কর্মীর মৃত্যুই বিক্ষোভকে দাবানলের মতো ছড়িয়ে দেয় সারা দেশে।
এমপিদের ভাতা বৃদ্ধিতে ক্ষোভ
সরকার ৫৮০ সংসদ সদস্যের জন্য মাসিক ৫০ মিলিয়ন রুপিয়া (প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার) আবাসন ভাতা অনুমোদন করে। এটি দেশটির ন্যূনতম মজুরির ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি। অর্থনৈতিক কষ্টে থাকা জনগণের কাছে খবরটি পৌঁছাতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আফফানের মৃত্যুতে দাবানল
আগস্টের শেষ দিকে রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ চলাকালে পুলিশের সাঁজোয়া যান চাপা দিলে মারা যান ২১ বছর বয়সী ফুড ডেলিভারি কর্মী আফফান কুর্নিয়াওয়ান। তিনি কোনো আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন না, কেবল ডেলিভারিতে যাচ্ছিলেন। দুই পায়ের জীবনসংগ্রাম করা লাখো স্বল্প আয়ের মানুষের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠেন আফফান। তার মৃত্যু আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দেয়।
দেশজুড়ে বিক্ষোভ, সহিংসতায় উত্তেজনা
আফফানের মৃত্যুর পর রাজধানী জাকার্তা ছাড়াও সুমাত্রা, সুলাওয়েসি, কালিমান্তান ও বালির রাস্তায় মানুষ বিক্ষোভে নামে। তাদের আটকাতে পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ব্যবহার করে। একাধিক স্থানে সংঘর্ষ হয়, সরকারি ভবন ও এমপিদের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট ঘটে। সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিলে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ: বৈষম্যের শাসন
উত্তর সুমাত্রার ফুড ডেলিভারি কর্মী ইমরান বলেন, “আমাদের আন্দোলনের মূল কারণ বৈষম্য। অর্থনৈতিক বৈষম্য, শিক্ষাগত বৈষম্য, স্বাস্থ্য বৈষম্য ও অসম জনসেবার কারণে ক্ষোভ জমে উঠেছে। প্রতিনিধিদের ভাতা বৃদ্ধির ঘোষণায় আগুনে ঘি পড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নিয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো চিন্তা নেই। আমরা শুধু চাই একটি স্বচ্ছ আমলাতন্ত্র, ন্যায্য সুযোগ এবং বৈষম্যহীন দেশ।”
সরকারের পিছু হটা
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, জনপ্রতিনিধিদের আবাসন ভাতা বাতিল করা হয়েছে, বেতন বৃদ্ধি বন্ধ করা হয়েছে এবং বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতেই যে বিক্ষোভ থেমে যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই।
বিডি প্রতিদিন/আশিক