ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় এক বিশাল সামরিক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। যে জন্য ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে ওয়াশিংটন। হারেৎজ পত্রিকার প্রতিবেদনে ফাঁস হওয়া নতুন নথিতে দেখা গেছে, এই প্রকল্পের অর্থায়ন হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বার্ষিক সামরিক সহায়তা প্যাকেজের আওতায় — যা ২০১৬ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার শাসনামলে প্রবর্তিত হয়েছিল।
এই প্যাকেজ অনুযায়ী ইসরায়েল প্রতি বছর ৩.৮ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা পাচ্ছে। যার একটি বড় অংশ এখন খরচ হচ্ছে বিমান ঘাঁটির রানওয়ে, হেলিকপ্টার হ্যাঙ্গার, গোলাবারুদ মজুত করার স্থাপনা, কমান্ড সেন্টার এবং শায়েতেত ১৩ নামে পরিচিত ইসরায়েলি নেভি কমান্ডো ইউনিটের নতুন সদর দফতর নির্মাণে।
নথি অনুযায়ী, বর্তমানে ২০টিরও বেশি পৃথক প্রকল্প কার্যক্রমে রয়েছে কিংবা ভবিষ্যতে শুরু হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে যে কাজগুলো চলছে, তার আর্থিক পরিমাণ ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলো মিলিয়ে এই পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই নির্মাণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলের সদ্য অধিগ্রহণ করা সিএইচ-৫৩কে হেভি লিফ্ট হেলিকপ্টার এবং কেনি-৪৬ পেগাসাস রিফুয়েলিং বিমানের জন্য কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা স্থাপন। একই সঙ্গে ইসরায়েলের বাড়তে থাকা এফ-১৫আইএ এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্যও অবকাঠামো নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
যদিও কাগজে কলমে এসব প্রকল্পের দরপত্র মার্কিন কোম্পানিগুলোর কাছে বরাদ্দ করা হয়, বাস্তবে বেশিরভাগ নির্মাণ কাজই সম্পন্ন করছে ইসরায়েলি ঠিকাদাররা। এমনকি প্রকল্পগুলোর প্রকৃত অবস্থান গোপন রাখতে অনেক ক্ষেত্রেই ছদ্মনামে কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৃহৎ ব্যয়ের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটনের ইসরায়েলে সামরিক উপস্থিতি আরও গভীর হচ্ছে — যা পারস্পরিক নিরাপত্তার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যাখ্যার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এদিকে, মার্কিন অভ্যন্তরে ইসরায়েলের অস্ত্র সহায়তা বন্ধের দাবিও জোরালো হচ্ছে, বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষিতে। যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত ৫৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
এই প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ১২ দিনের আগ্রাসনের আগেই। জুনের ১৩ তারিখে ইসরায়েল ইরানে একটি বেপরোয়া সামরিক হামলা চালায়, যার ফলে ইরানের একাধিক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী এবং সাধারণ নাগরিক নিহত হন।
জবাবে, ইরান মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ট্রু প্রমিস থ্রি নামে চালানো এই পাল্টা অভিযানে ইসরায়েলের সামরিক শক্তির উল্লেখযোগ্য ক্ষতি সাধন করে তেহরান।
বর্তমান পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইসরায়েল-মার্কিন সম্পর্ক এখন শুধু কূটনৈতিক নয়, বরং দিন দিন আরও বেশি সামরিক জোটে রূপ নিচ্ছে।
সূত্র: প্রেস টিভি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল