দীর্ঘদিন ধরে ঋণের ভারে ভারাক্রান্ত রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক এখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে পেয়েছে। তারল্য সংকট কাটিয়ে ব্যাংকটি ফিরেছে সচ্ছলতায়। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মুজিবুর রহমানের বহুমুখী দক্ষতা ও নিরলস পরিশ্রমের ফলেই এ অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৪ সালের নভেম্বরে জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেন মুজিবুর রহমান। ব্যাংকিং খাতে ‘ক্যারিশমাটিক ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত এই কর্মকর্তা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে নানা ইনোভেটিভ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ফলে ব্যাংকটির প্রতি আমানতকারীদের আস্থা আবারও ফিরে এসেছে।
জনতা ব্যাংকের বিভিন্ন সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে দেশে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেয় ব্যাংকটিতে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ব্যাংকটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা ফেরে।
জনতা ব্যাংকে ঋণ গ্রহণকারী কয়েকটি বড় গ্রুপ বেক্সিমকো, এস. আলম, এননটেক্স, ওরিয়ন, সিকদার, ক্রিসেন্টসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৬৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনাদায়ী ছিল। এসব কারণে ব্যাংকটি কার্যত অস্তিত্ব সংকটে পড়েছিল।
এমডি মুজিবুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেন। তিনি জানান, মাত্র ৮ মাসের মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার নতুন আমানত সংগ্রহ করা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আগে যে এলসি পেমেন্টের ঘাটতি ছিল, তার প্রায় পুরোটাই পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে জনতা ব্যাংকের সম্পর্ক অনেকটাই পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা ব্যাংকের সব ভঙ্গুর প্যারামিটার চিহ্নিত করে উন্নয়নের পথে কাজ করছি। ইতোমধ্যে দেশের সকল জোনে সম্মেলন করেছি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উৎসাহিত করেছি কর্মদক্ষতা ও নৈতিকতা বজায় রাখতে।”
প্রমোশন বিষয়ে তিনি জানান, “এখন থেকে পদোন্নতি নির্ভর করবে একমাত্র পারফরম্যান্সের ওপর। নিজ নিজ যোগ্যতায় সবাই এগিয়ে যাবে- এটাই আমাদের নীতি।”
বর্তমানে জনতা ব্যাংক যে কোন অঙ্কের চেকের বিপরীতে অর্থ প্রদান করতে পারছে। দেশের অনেক ব্যাংক যেখানে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে জনতা ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে।
ব্যাংক খাত বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে জনতা ও ব্যাংক ধীরে ধীরে স্থিতিশীলতায় ফিরছে। বিশেষ করে জনতা ব্যাংকের বর্তমান নেতৃত্বের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ব্যাংকটিকে টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত