ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের মালিকানাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’-এর বিরুদ্ধে গ্রাহকদের ৪০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ৫০০ জন উদ্যোক্তা ও তিন হাজার জন ভোক্তার আনুমানিক ৪০০ কোটি টাকা বকেয়া রেখে উধাও হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ জানানো হয়।
বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিভিন্ন প্রভাব খাটিয়ে গ্রাহক ও সরবরাহকারীদের টাকা আত্মসাৎ করেছে ধামাকা শপিং। একেকজন গ্রাহক লাখ লাখ টাকা হারিয়ে পথে বসেছেন। ব্যবসায়ীরাও সর্বস্বান্ত হয়েছেন। আমাদের পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হোক।
তারা বলেন, ধামাকা শপিং নানা প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের আশ্বস্ত করা হয় যে, এই কোম্পানির চেয়ারম্যান দেশের স্বনামধন্য অর্থোপেডিক চিকিৎসক, এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও জয়েন্ট কেয়ার কো-অর্ডিনেটর ডা. এম আলী ওরফে মো. মুজতবা আলী। এছাড়া, ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এস এম ডি জসিমউদ্দিন চিশতী।
তারা আরও বলেন, আমরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ও গ্রাহক ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ধামাকা শপিং ডটকমের নির্দেশনা এবং চুক্তি অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করে যাচ্ছিলাম ও গ্রাহক পণ্য ক্রয় করে যাচ্ছিলাম। মার্চ ২০২১ পর্যন্ত ডেলিভারি এবং পেমেন্টসহ মোটামুটি সব কিছু ঠিক থাকলেও পরবর্তী সময় থেকে পণ্য ডেলিভারি সম্পূর্ণ হলেও আমরা মার্চেন্ট বা সেলাররা চুক্তিনামা অনুযায়ী সমুদয় বকেয়া বিল পাইনি। এমনকি ক্রেতারা তাদের পণ্য বাবদ অগ্রিম পেমেন্ট করা কোনো টাকাই ফেরত পায়নি।
ভুক্তভোগীরা আরও অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পাওনাকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্যে প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সিরাজুর ইসলাম রানা গং ও পরিচালক কর্মকর্তাদের সাথে বারবার যোগাযোগ করেও মালিকপক্ষের কারো সাথে এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো সাক্ষাৎ বা সমাধান পাইনি। কোম্পানির চেয়ারম্যান ডা. এম আলীর সাথে সরাসরি সাক্ষাতের জন্যে তার বাসভবনে কয়েকবার যাওয়ার পরও তিনি আমাদের সাথে দেখা করেননি। তার সাথে ভার্চুয়ালি সভা করার জন্য একাধিকবার আমরা ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের সর্বাত্মক চেষ্টা করার পরও কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি। আমাদের পক্ষ থেকে বিনয়াবনত অনুরোধ করার পর কোম্পানির দুইজন মালিকের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জসিম উদ্দিন চিশতী ও ডা. এম আলী মাঝে মাঝে ভার্চুয়াল সভা ও ফেসবুকে লাইভ প্রোগ্রাম করে বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই তিনি রক্ষা করেননি।
বক্তারা জানান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বর্তমানে সপরিবারে আমেরিকায় পলাতক রয়েছেন। এই প্রতারণার সাথে জড়িত অন্যতম মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন চিশতী, ডা. এম আলী, সিরাজুল ইসলাম রানাসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ১১৬ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে। চেয়ারম্যান ডা. এম আলী এই চক্রের অন্যতম মূল হোতা। এর যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভায়রা ভাই ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহামুদের বন্ধু পরিচয় দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে তাদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। তারা এতদিন অধরা থেকেছেন এবং হাতিয়ে নেওয়া এসব অবৈধ অর্থের বিনিময়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল অবৈধ সম্পত্তির পাহাড়।
পাওনাকৃত টাকা পাওয়ার মানবিক সহায়তা করার নিমিত্তে বিগত সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে একাধিকবার মানবিক আবেদন করার পরেও কোনো সমাধান পাইনি।
ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা ও ইচ্ছা নিয়ে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হয়ে ই-কমার্সে পণ্য সরবরাহকারী হিসেবেই ব্যবসা করার নিমিত্তে বিনিয়োগ করেছি। অনেকে ভোক্তা হিসেবে গণ্য অর্ডার করেছে। আমাদের স্বপ্ন এই অল্প সময়ে ও কম বয়সে ধূলিসাৎ যেন না হয়, সে জন্যে বর্তমান সরকারের কাছে চেয়ারম্যানের বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। আমরা আশা করছি, আমাদের ন্যায্য পাওনা অর্থ ফেরত পেতে সরকারসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘ধামাকা শপিং’-এর চেয়ারম্যান ডা. মুজতবা আলীকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
বিডি প্রতিদিন/কেএ