ভারত শাসিত কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ের পাহাড়ি রিসোর্টের কাছে এক ভয়াবহ হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। এরপর কেটে গেছে এক সপ্তাহ। শহরটি এখন নীরব ও জনশূন্য। যদিও অল্প সংখ্যক পর্যটক ফিরতে শুরু করেছেন।
গত সপ্তাহে দর্শনার্থীদের জন্য প্রধান রাস্তা ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। হোটেলগুলো সম্পূর্ণ খালি করে দেওয়া হয়েছে। সেসব স্থানে ফিরছে কিছুটা প্রাণচাঞ্চল্য।
গত মঙ্গলবার অস্ত্রধারীরা পর্যটকদের ওপর গুলি চালায়। পাহেলগাঁও থেকে তিন মাইল দূরে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত তৃণভূমি বৈসরন পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন ওই পর্যটকরা। এটি স্থানীয়দের কাছে ভারতের সুইজারল্যান্ড হিসাবে পরিচিত।
সাম্প্রতিক বছরগুলির মধ্যে এই আক্রমণটি সবচেয়ে মারাত্মক। যা অনেক পরিবারকে শোকে ভাসিয়েছে। এতে ভারতের অভ্যন্তরে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম হয়েছে।
এরপরের দিনগুলোতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উভয় পক্ষই কাশ্মীরকে সম্পূর্ণরূপে দাবি করে কিন্তু এটি কেবল আংশিকভাবে শাসন করে। উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
দিল্লি থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়া হবে কিনা তা নিয়ে এখন জল্পনা চলছে। কাশ্মীর সরকার উপত্যকার অর্ধেকেরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ভারত কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে এবং তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে।
১৯৮৯ সালে বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পর থেকে এই অঞ্চলে প্রায়শই সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। অস্ত্রধারীরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। পর্যটকদের এভাবে হত্যার ঘটনা বিরল। যা স্থানীয় ব্যবসা এবং পর্যটক উভয়কেই হতবাক করেছে।
পাহেলগাঁওয়ের মতো জায়গায় পর্যটন অর্থনীতির একটি প্রধান ভিত্তি। এখন আশঙ্কা করা হচ্ছে যে অনেক জীবিকা অপূরণীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
মুম্বাইয়ের একজন পর্যটক অক্ষয় সোলাঙ্কি বলেন, হামলার দিন ভ্রমণকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। কিন্তু তারা তাদের যাত্রা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ বাড়ি ফেরার বিমান তারা পাচ্ছিলেন না।
অন্যান্য পর্যটকরা বলেছেন, স্থানীয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে ক্রমাগত আশ্বাস তাদের স্বস্তির অনুভূতি দিয়েছে। রাজধানী শ্রীনগর থেকে দর্শনার্থীদের নিয়ে আসা একজন চালক বিবিসি হিন্দিকে বলেন, তিনি কাশ্মীর ভ্রমণকারীদের কাছে অনুরোধ করছেন যেন তারা কাশ্মীর থেকে দূরে না যান।
শাল বিক্রেতা রাফি আহমেদ বলেন, তিনি মাত্র কয়েকটি শাল বিক্রি করতে পেরেছেন। পর্যটকরা আসা বন্ধ করলে ভবিষ্যতে তার জীবিকা নির্বাহ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
যারা পর্যটকদের পাহেলগাঁও আসতে উৎসাহিত করেছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন বলিউড অভিনেতা অতুল কুলকার্নি। যিনি হামলার কয়েকদিন পর শহরটি পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি বিবিসি হিন্দিকে বলেন, অস্ত্রধারীদের বার্তা যদি এখানে আসবেন না, তাহলে আমাদের আরও বেশি সংখ্যায় এসে সাড়া দেওয়া উচিত। বুকিং বাতিল করবেন না, আপনার অন্যান্য পরিকল্পনা বাতিল করে এখানে আসুন।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল