কুষ্টিয়ায় নতুন করে কোভিড-১৯ এর উপসর্গে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানী ঢাকা থেকে আসা দুইজন কোভিড পজিটিভ রোগী সম্প্রতি কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পাশাপাশি, জেলার প্রতিটি এলাকায় জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসকদের মতে, এখনই সতর্ক না হলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এই অবস্থায় নড়ে চড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
অপরদিকে, জেলার একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনায় চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ল্যাবটি বন্ধ হয়ে ছিল এক বছর আগে। কিন্তু চুরির ঘটনা ঘটে ধাপে ধাপে, যা মাসখানেক আগে জানতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল থেকে এ জেলায় কোভিডের প্রকোপ শুরু হলেও ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত করোনায় মারা যান ৮৫৫ জন। এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ৪ হাজার রোগী। এর মধ্যে ২০২১ সালের জুলাই মাসে মারা যান সর্বোচ্চ ৩৪২ জন। এরপর থেকে মৃত্যুহার কমতে শুরু করে।
বর্তমানে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত ২০ জন নারী-পুরুষ জ্বর, সর্দি, কাশি ও ঠান্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট নার্সরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, "পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ নয়, তবে আমরা প্রস্তুত। আইসোলেশন ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঢাকা থেকে আসা দুইজন কোভিড পজিটিভ রোগী ভর্তি না হয়ে চলে গেছেন—এ ধরনের অবহেলা করোনার বিস্তার ঘটাতে পারে। তাই জ্বর, সর্দি, কাশি থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি।"
পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরি প্রসঙ্গে হাসপাতালের আরএমও ডা. হোসেন ইমাম বলেন, "ধারণা করা হচ্ছে গত চার মাস ধরে ধাপে ধাপে যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। মাসখানেক আগে বিষয়টি টের পাওয়া যায়। বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয় এবং তারা রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। যারা ল্যাব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের চরম অবহেলা ছিল।"
২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল ল্যাবটি চালু হয়। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হলেও সংক্রমণ কমে যাওয়ায় ল্যাবের কার্যক্রম এক বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই দায়িত্ব ছিল কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের দুই কর্মচারীর হাতে। চুরির ঘটনায় তদন্ত শেষ হলেও এখনো দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
ডা. হোসেন ইমাম জানান, "কোভিড মোকাবিলায় আমরা ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রেখেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।"
বিডি প্রতিদিন/আশিক