গাজা অভিমুখী মানবিক বহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র ওপর ইসরায়েলের হামলা ও ফিলিস্তিনে চলমান গণহত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এসব বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে ইসরায়েলের হামলা ন্যক্কারজনক বলে তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। পাশাপাশি আটক মানবাধিকারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের অবিলম্বে মুক্তি এবং গাজার অবরোধ ভাঙতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
গতকাল জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমের উত্তর ফটক থেকে শান্তিনগর পর্যন্ত মিছিল করেন জামাতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা। মিছিলের আগে সমাবেশে অংশ নেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, আবদুল হালিম, উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। সমাবেশে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে গণহত্যা চালাচ্ছে, আজ সারা দুনিয়ায় এর প্রতিবাদ চলছে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফিলিস্তিন যতদিন মুক্ত না হয়, যতদিন স্বাধীন না হয়, আমরা ততদিন তাদের পাশে থাকব, আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে, আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টায় ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ সিনার্জি অ্যালায়েন্স’ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে খামারবাড়ি মোড় ঘুরে সংসদ ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। ‘ফ্লোটিলা রক্ষা করো ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে প্রায় ৭০টি পরিবেশ, জলবায়ু, মানবাধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, শিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অংশ নেয়। বক্তারা বিক্ষোভে পাঁচ দাবি জানান, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আটক মানবাধিকারকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং গাজার অবরোধ ভাঙতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নিতে হবে। ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এতে শ্রমিক নিরাপত্তা ফোরামের সদস্যসচিব সিকান্দার আলী মিনা, শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল, জাতীয় শ্রমিক জোটের সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আকতার চৌধুরীসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা অংশ নেন। শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশসহ ৪৪টি দেশের ৫০০ মানবাধিকারকর্মী সুমুদ ফ্লোটিলা অভিযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। জাহাজগুলোতে নেতৃত্বদানকারী তরুণ মানবাধিকারকর্মী, পরিবেশকর্মীসহ বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও আলোকচিত্রী এবং সমাজকর্মী শহিদুল আলম। তাঁদের মধ্যে অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। অন্যদিকে গতকাল বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগের ‘ফিলিস্তিন সংহতি কমিটি’র পক্ষ থেকে সমাবেশ ডাকা হয়। এতে অংশ নেয় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। গাজামুখী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয় প্রতিবাদ সমাবেশে। এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রতিনিধি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা গতকাল দুপুরে জাকসু নবনির্বাচিত প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এরপর সমাবেশে অংশ নেন তারা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, এই পৃথিবীর এক নম্বর টেরোরিস্ট দেশ হলো ইসরায়েল এবং তাদের নেতা নেতানিয়াহু। মানবতাবিরোধী কাজের জন্য ইসরায়েল একাই দায়ী নয়। তার পেছনে অনেক শক্তি কাজ করছে, যাদের মধ্যে আছে আমেরিকা। মানবতাবিরোধী কাজে উভয়ই সমান দোষী। সময় এসেছে, মানবতা লঙ্ঘনকারীদের ধ্বংস করতে হবে এবং ফিলিস্তিনকে মুক্ত করতে হবে। সেখানে জাতিসংঘ যেন তার মুখ্য ভূমিকা পালন করে আমরা সে আহ্বান জানাই।