বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে বাংলায় কথা বললেই ‘বাংলাদেশি তকমা’ দিয়ে তাদের হেনস্তা করা, কখনো ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা, আবার কখনো সোজা বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হচ্ছে। মূলত বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী রাজ্য হওয়াতেই এ রকম হেনস্তার অভিযোগ সামনে আসছে। আর তা নিয়েই মমতার আক্ষেপ ‘পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভাষা যদি এক হয়, তাহলে আমরা কী করতে পারি?’ ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি। মিটিং, মিছিল, বৈঠক ও আন্দোলন চলছে। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলাদেশি তকমা দিয়ে অত্যাচার বা হেনস্তার অভিযোগ আসছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় প্রশাসনিক কর্মসূচি থেকে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বাঙালি বিদ্বেষের অভিযোগ তোলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
তিনি বলেছেন, ‘ভারতে যেমন পাঞ্জাব রয়েছে, তেমনি প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানেও একটা পাঞ্জাব প্রদেশ রয়েছে। কই সে কথা তো বলো না! আর আমাদের পাশে বাংলাদেশ আছে বলে... কিন্তু বাংলাদেশ তো আর আমরা তৈরি করিনি। তোমরা করেছো, তোমাদের প্রপিতামহরা করেছে। দুজনের ভাষা যদি এক হয় তাহলে আমরা কী করতে পারি?’
মমতার অভিমত, বাংলা ভাষা সারা পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে এবং গোটা এশিয়াতে দ্বিতীয়তম স্থানে রয়েছে। বাংলা একটা আন্তর্জাতিক ভাষা। হার্ভার্ড, অক্সফোর্ড, কলম্বিয়ার মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বাঙালিদের ছাড়া চলবে না। তাহলে বাংলা ভাষা কেন বলতে দেবে না? আসলে ওরা (বিজেপি) বাংলাকে সহ্যই করতে পারে না।
বাংলা দেখলেই তড়বড় করে জ্বলতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু, তারা কোন ভাষায় কথা বলতেন? বাংলার ইতিহাসকে ভুলে যাবেন না। আপনারা যদি বলেন যে সব বাঙালিই বাংলাদেশি... তা ছাড়া ভারতের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারই তো বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল যে, ১৯৭১ সালে মার্চ মাস পর্যন্ত যারা ভারতে আসবে তারা ভারতীয় নাগরিক। বাংলাকে সম্মান জানিয়ে আমরা একবার নয়, হাজার বার, লাখো বার ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেব। আজকে ক্ষমতায় আছে বলে ওরা বাংলাকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে।’
সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘চোর’ মন্তব্যেরও পাল্টা জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার কলকাতার দমদমে একটি রাজনৈতিক সভা থেকে দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূল কংগ্রেসকে প্রবল নিশানা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই সভা থেকেই মোদির বক্তব্য ছিল ‘ভারত সরকার দিল্লি থেকে যে অর্থ রাজ্যের উন্নয়নে পাঠায়, সেটা সাধারণ মানুষের উন্নয়নের খরচ হয় না। সেটা মহিলাদের জন্য ব্যবহার করা হয় না। সেই অর্থ তৃণমূল তাদের ক্যাডার পুষতে খরচ করে।’