রাষ্ট্র সংস্কার ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ কাল থেকে শুরু হবে। প্রথম দফা সংলাপে বেশ কিছু প্রস্তাবে ঐকমত্য হলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মত রয়েছে। যা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকবে বলে জানা গেছে।
কমিশন সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের উদ্বোধন করবেন ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের একজন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এই সংলাপের মধ্য দিয়ে ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। ঈদের আগে- পরে আরও দুয়েকটি সংলাপ অনুষ্ঠান হতে পারে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, কমিশন আশা করেছিল, গণ অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে যে আওয়াজ উঠেছিল তাতে রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার ইস্যুতে একমত হবে। কিন্তু বড় দলগুলো একমত হতে না পারায় ‘জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশয় তৈরি হতে পারে। তাই ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ হবে বিষয়ভিত্তিক। যেসব মৌলিক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেনি সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ঈদের আগে দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ শেষ না হলে ঈদের পরও চলবে। প্রথম দফা সংলাপের বিস্তারিত তুলে ধরে গত ২৬ মে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত মতামত ও প্রথম দফা আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রশ্নে ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি। এর মধ্যে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের কাঠামো, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কতবার নির্বাচিত হতে পারবেন, একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া কী হবে এ ধরনের মৌলিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অমীমাংসিত থেকে গেছে। তবে এসব বিষয়ে অনেক দলই আরও আলোচনার কথা বলেছে এবং নমনীয়তা দেখিয়েছে। কমিশনের সহসভাপতি জানান, দেশের পুরোনো চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা, বিদ্যমান জেলা পরিষদ ব্যবস্থা বাতিল করা, ওয়ার্ড মেম্বারদের ভোটে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এবং উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান পদটি বিলুপ্ত করার প্রস্তাবে বেশির ভাগ দল একমত হয়নি। এ ছাড়া প্রতিটি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আরও কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। কিছু বিষয় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা পরবর্তী ধাপের আলোচনার শেষে এইসব সুপারিশের ব্যাপারে দলগুলোর চূড়ান্ত অবস্থান জানাতে পারব বলে আশা করি।
রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের একটি তালিকা তৈরি করে রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত আহ্বান করে। সংস্কার প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছাতে লিখিত মতামত নেওয়ার পাশাপাশি গত ২০ মার্চ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে কমিশন। এ পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট এই সংলাপে অংশ নিয়ে তাদের মতামত তুলে ধরার পাশাপাশি নানা বিষয়ে আলোচনা করেছে। আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালসহ অনেক বিষয়ে একমত হলেও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ ক্রিয়াশীল দলগুলো। এই অবস্থায় দ্বিতীয় দফা সংলাপে বসছে ঐকমত্য কমিশন।