সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আজ শনিবার চট্টগ্রামের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে একটি মুক্ত আলোচনা সভা করেছে। এটি “রাজনীতিতে নারী ও যুবাদের ক্ষমতায়ন” শীর্ষক চলমান প্রকল্পের অংশ। এই অনুষ্ঠানে সিজিএসকে সহযোগিতা করেছে নেদারল্যান্ডস দূতাবাস।
এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্য তরুণ নাগরিকদের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, যেখানে তারা জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মুক্ত সংলাপে অংশ নিতে পারে এবং যার মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক শাসন, স্বচ্ছতা ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বোঝাপড়া উৎসাহিত হয়।
বক্তাদের মধ্যে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম মহানগরের সাবেক আমির, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহাজাহান চৌধুরী, এনসিপির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জুবাইরুল হাসান আরিফ, চট্টগ্রাম মহানগর সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, গণসংহতি আন্দোলনের চট্টগ্রাম শাখার হাসান সমন্বয়কারী মারুফ রুমি।
সিজিএস-এর সভাপতি ও সভার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান বলেন, “গত বছরের জুলাই আন্দোলনে তরুণ ও নারী সমাজ সামনের সারিতে ছিলেন। কিন্তু এখনো কোনো রাজনৈতিক দলই নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা নিশ্চিত করতে একটি জেন্ডার ইকুয়ালিটি চার্টার গ্রহণ করেনি। চট্টগ্রামে উচ্চপর্যায়ে কোনো নারী নেতা নেই, তাই আজকের মঞ্চে কেবল পুরুষ বক্তারাই উপস্থিত।”
তিনি প্যানেলকে প্রশ্ন রেখে আলোচনা শুরু করেন : “আন্দোলনের পরবর্তী বাংলাদেশে নারী ও তরুণদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে?”
ডা. শাহাদাত হোসেন নারীর অধিকার রক্ষায় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী নির্বাচনগুলোতে অতীতের তুলনায় আরও বেশি নারী প্রার্থী দেখা যাবে।
তিনি বলেন, “গত ১৬ বছরে অনেক নারী বিএনপির মধ্যেই রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। আমরা তাদের পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্বে রূপান্তরের সুযোগ করে দিতে চাই,”। তিনি বিএনপির তরুণ, প্রান্তিক কর্মীদের জন্য গঠিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কথা বলেন এবং দলীয়ভাবে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির উল্লেখ করেন।
শাহজাহান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে তাদের সঠিক অন্তর্ভুক্তি হয়নি। “এটা বদলাতে হবে,” তিনি বলেন। জামায়াত ২৯৪টি আসনের মধ্যে ৩০টিরও বেশি আসনে তরুণ প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে এবং চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরাসরি নির্বাচিত নারীনেত্রী রয়েছেন বলেও তিনি জানান।
অশোক সাহা জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে একটি বৈষম্যবিরোধী প্রতিবাদ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “এইবার তরুণদের ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল।’’
মনি স্বপন দেওয়ান বলেন, “যদিও নারী ও তরুণরা আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন, এক বছর পর আমাদের নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমরা আসলে পরিবর্তন আনতে পেরেছি কি না।” তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে বলে উল্লেখ করেন এবং তরুণ ও নারীদের অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলেও মত দেন।
হাসান মারুফ রুমি প্রশ্ন তোলেন: “যেসব সাহসী নারী আন্দোলনের সময় ভাইদের পুলিশি গ্রেপ্তার ঠেকিয়েছেন, তারা আজ কেন অনলাইনে হয়রানির শিকার হচ্ছেন? কেন তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে?” তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে নারীদের জন্য রাজনীতি করা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। “আন্দোলনের পর এই বাধা কিছুটা কমেছে, কিন্তু কাজ এখনো বাকি। নারীকে যদি ক্ষমতায়ন করতে চাই, তাহলে শুধু নারী শাখায় সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না, তাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আনতে হবে।”
জুবাইরুল হাসান আরিফ জানান, এনসিপি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। “আমরা এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ১০০টি সংসদীয় আসনে শুধু নারীরা সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।”
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ/ই