অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেল দুটি শামুকখোল ও একটি নিশি বকের বাচ্চা। রংপুর নগরীর সুপার মার্কেটের সামনে এই পাখিগুলো বিক্রি করতে এসেছিল একজন বিক্রেতা। এদৃশ্য হঠাৎ চোখে পড়ে মহানগর সুজনের সভাপতি ফখরুল আনাম বেঞ্জুর। তিনি সাথে সাথে পাখি বিক্রেতাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ আসতে দেরি করায় পাখি বিক্রেতা পাখি ফেলে পালিয়ে যান। পরে বন বিভাগে খবর দেয়া হলে তারা পাখি তিনটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। সেবা শুশ্রূষার পরে প্রায় এক মাস বয়সী পাখির বাচ্চাগুলো এখন ভাল আছে। বন বিভাগ বলছে, পাখিগুলো সুস্থ হলে তাদের মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেয়া হবে। ফখরুল আনাম বেঞ্জু এবং বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের তড়িৎ পদক্ষেপের কারণে ভোজন বিলাসীদের রসনা তৃপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে পাখি তিনটি।
জানা গেছে, এলাকাভেদে শামুকখোল- শামুকভাঙা, শামুক ঠোকরা ইত্যাদি নামে পরিচিত। অদ্ভুত ঠোঁটের জন্য খুব সহজে অন্যান্য পাখি থেকে এদের আলাদা করা যায়। ঠোঁটের নিচের অংশের সাথে উপরের অংশের বেশ বড় ফাঁক থাকে। কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে, তবে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এখনো পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। খাবার ও বাসস্থানের অভাবে পাখিটি এক সময় দুর্লভ হয়ে যেতে পারে এমনটা মনে করেন বন বিভাগ।
নিশি বক বলতে গেলে একশ ভাগ নিশাচর। সন্ধ্যাবেলা শব্দ করে বাতাসে উড়াল দিয়ে কাজ শুরু করে। নিশি বক সুলভ প্রজাতির বক হলেও বিগত কয়েকক দশক ধরে এদের সংখ্যা কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি। সে কারণে আই. ইউ. সি. এন. নিশি বককে আশঙ্কাহীন প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। স্ত্রী ও পুরুষ বক উভয়ে দেখতে একই রকম, তবে পুরুষ বক আকারে তুলনামূলক একটু বড় হয়ে থাকে। যুবারা বাদামী, যার উপর অনেক স্পষ্ট সাদা দাগ এবং রেখা থাকে। কারো কারো মাথার উপর কালো অংশ দেখা যেতে পারে। এদের চোখ এসময়ে কমলা রঙের হয়। পুকুর, দিঘী, ছোট নদী, খাল, বিল, হ্রদ, জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ ও কৃষিভূমি, বিশেষত ধানক্ষেত নিশি বকের প্রধান বিচরণস্থল।
পাখি তিনটির উদ্ধারকারি ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, দুদিন আগে সুপার মার্কেটে গিয়েছিলাম একটি কাজে। ব্যাগ হাতে হঠাৎ একজন এসে বলেন স্যার পাখি কিনবেন। পাখি তিনটি দেখে তাকে কৌশলে একটি দোকানে নিয়ে গেলাম। সাথে সাথে পুলিশে খবর দিলাম। নবাবগঞ্জ ফাঁড়ি থেকে পুলিশ সময় মতো না আসায় পাখি বিক্রেতা কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে পাখিগুলোকে বন বিভাগে হস্তান্তর করি।
রংপুর বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বলেন, পাখি তিনটি বন বিভাগের পরিচর্যায় রয়েছে। এখন অনেকটা সুস্থ। ভালোমত উড়তে শিখলে তাদের ছেড়ে দেখা হবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল