জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব প্রতিনিয়ত তীব্রতর হয়ে ওঠায়, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে জরুরি এবং সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ এখন অনিবার্য। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চরম আবহাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়গুলো প্রমাণ করছে যে, পৃথিবীর পরিবেশব্যবস্থা দ্রুত সংকটের দিকে এগোচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কপ৩০-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দৃষ্টি এখন ব্রাজিলের আমাজন অঞ্চলের বেলেম শহরের ওপর। জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনীয়তার পটভূমিতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধি, মন্ত্রী ও বিশেষ দূত উপস্থিত হয়েছেন।
সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ে আবারও সতর্কবার্তা উপস্থাপন করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরে তাপমাত্রা বিশ্ব প্যারিস চুক্তির ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিজ্ঞানীরা। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস ফিল্ড বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা জরুরি, কারণ পৃথিবী যত বেশি সময় ধরে এর বাইরে থাকবে, অ্যান্টার্কটিকা, গ্রিনল্যান্ড এবং আমাজন রেইনফরেস্টসহ আরও বেশ কিছু অঞ্চলের টিপিং পয়েন্ট অতিক্রমের ঝুঁকি তত বেশি হবে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, অনেক প্রবালপ্রাচীর ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সেই সর্বোচ্চ বিন্দু অতিক্রম করে ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা চাইছেন কপ৩০-এর মাধ্যমে এই টিপিং পয়েন্ট বা বিপজ্জনক মাত্রা প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্ববাসীকে একত্রিত করতে।
বিপর্যয়কর টিপিং পয়েন্ট এড়াতে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড অপসারণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন পটসডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী এবং জাতিসংঘ ও কপ৩০ প্রেসিডেন্সির একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা জোহান রকস্ট্রোম। তিনি আরও বলেন যে, বিশ্ব উষ্ণতা ১.৭ ডিগ্রি সে.-এ সীমাবদ্ধ রাখতে প্রতি বছর বাতাস থেকে ১০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড সংগ্রহ বা অপসারণ করতে হবে।
ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমাকে ‘একটি জীবনরেখা’ হিসেবে বর্ণনা করেছে এবং বিশ্ব এটিকে সম্মান করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। কপ৩০-এ মূলত জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বাস্তবায়নভিত্তিক কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, জলবায়ু অর্থায়নে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুটির অগ্রগতি, লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলের কাঠামো চূড়ান্ত করা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির রোডম্যাপ, কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসা, অভিযোজন সহায়তা বৃদ্ধি এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি স্থানান্তর ও সক্ষমতা উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। পাশাপাশি বন সংরক্ষণ, সমুদ্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু ন্যায়বিচার, কার্বন বাজার ও আর্টিকেল ৬ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত আলোচনাও পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হবে।
লেখক : ডিন, বিজ্ঞান অনুষদ; অধ্যাপক, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ; যুগ্ম সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং চেয়ারম্যান, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)