জুলাই গণ অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা ছাত্র উপদেষ্টা ও এনসিপি নেতাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছেন দলের সদ্যবহিষ্কৃত নেতা মুনতাসির মাহমুদ। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে সম্প্রতি এনসিপি থেকে অব্যাহতি পাওয়া দলের সদ্যসাবেক কেন্দ্রীয় সংগঠক মুনতাসির মাহমুদ শুক্রবার রাতে ফেসবুক লাইভে এসে এসব মন্তব্য করেন।
এ সময় মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে জুলাইকে বিক্রি করে দিয়েছে ছাত্র উপদেষ্টারা। সব উপদেষ্টার মধ্যে এই ছাত্র উপদেষ্টারা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেছে। ছাত্র উপদেষ্টারা দুর্নীতির চ্যাম্পিয়ন।’
তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর কোনো সমন্বয়ক বা অন্য কেউ যখন কোনো সমস্যা নিয়ে বা অভিযোগ নিয়ে কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখন তাদের বলা হতো ওই যে ছাত্র উপদেষ্টা আছেন তাকে বলো। তিনি যদি অনুমতি দেন তাহলে দেখা করতে দেব। ছাত্র উপদেষ্টাদের হাতে অ্যাবসুলেট পাওয়ার ছিল। ডিসি, ওসি, এসেনশিয়াল ড্রাগসের এমডি বসাও, পেট্রোবাংলার এমডি বসাও, এক শ কোটি টাকা দুই শ কোটি টাকা নাও, অ্যাবসুলেট পাওয়ার ছিল তাদের। তারা জুলাইয়ের সঙ্গে গাদ্দারি করেছে, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি করেছে।’
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন জেলায় পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) নিয়োগ দিতে ৫০ লাখ করে টাকা দাবি করেছেন আখতার হোসেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন আমি ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের পরে তখন আসিফ নজরুল স্যারেরা দায়িত্ব নিয়েছেন। তখন সারা দেশে পিপি বসানো হচ্ছে। তখন আমাদের নরসিংদীর শিরিন আপা (শিরিন আক্তার শেলী), তার ছেলে গোলাম রেশাদ তমাল আমাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন যিনি আন্দোলনে আহত হয়েছিলেন; সেই শিরিন আপার নাম প্রস্তাব করলাম।’
মুনতাসির মাহমুদ বলেন, ‘আখতারের লোকজন তখন শিরিন আপার নাম কেটে দিয়ে সেখানে আরেক নারীর থেকে টাকা খেয়ে, তার নাম দিয়ে দিল। অথচ এই শিরিন আপা ফ্যাসিবাদী আমলে কী পরিমাণ আন্দোলন করেছে, আমাদের কী পরিমাণ সমর্থন দিয়েছে এই আখতারকেও দিয়েছে, তা বলার মতো না।’
তিনি বলেন, ‘সে (আখতার) বলে পিপি বানাতে হলে ৫০ লাখ টাকা লাগবে। আরেকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে শিরিন আপার নাম কেটে দিয়েছে আখতার হোসেন। পরে আমরা, তারেক ভাইসহ আসিফ নজরুলের কাছে গিয়ে বলেছি, উনি নির্যাতিত, আপনিও তাকে চেনেন; তার ছেলেও ভুক্তভোগী। এই মানুষটা সরকারি কোনো সুযোগসুবিধা নেননি এবং তিনি যোগ্য লোক, তাকে সম্মানিত করেন। আসিফ নজরুলকে এভাবে বলার পর, তিনি শিরিন আপাকে পিপি বানিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আসিফ নজরুল তাকে (শিরিন) পিপি বানিয়েছেন, সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিয়ে বলে-আপা ৫০ লাখ টাকা লাগবে। আপনাকে পিপি বানিয়ে দিয়েছি। কাজ হয়ে গেছে, ৫০ লাখ টাকা লাগবে। শিরিন আপা খুশি হয়ে নিজের গাড়িতে বসে আখতারের পিএস আতিক মুন্সিকে খুশি হয়ে এক লাখ টাকা দিয়ে দিছে। অনেকে সাক্ষী আছে।’
এনসিপি থেকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি পাওয়া এই কেন্দ্রীয় সংগঠক বলেন, ‘এক লাখ টাকা দেওয়ায় সে (আখতার) রাগে-ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শিরিন আপাকে কল দিয়ে বলে, ৫০ লাখ টাকা লাগবে, আমরা যেমন নাম দিতে পারি তেমনি নাম কেটেও দিতে পারি। এ ধরনের অন্যায় কথা বলেছে।’
এ সময় দুর্নীতির এসব তথ্য ফাঁস করায় তাঁর নিজের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও জানান মুনতাসির। তবু ধীরে ধীরে এনসিপির দুর্নীতিবাজ অন্য নেতাদের তথ্যও ফাঁস করবেন বলে জানান তিনি।