চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পোশাক আমদানি আগের বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৪৭ কোটি ইউরো। এই প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি ছিল পরিমাণ বৃদ্ধির চাপ। এ সময়ে ইউরোপের মোট পোশাক আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৮০ কেজি, অথচ গড় ইউনিট মূল্য কমেছে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ইউরোপের বাজারে চাহিদা বাড়লেও ক্রেতারা মূলত কম দামে বেশি পোশাক সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছে বলে এই পরিসংখ্যানে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয় মাসে ইউরোপে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ১৩ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ১ হাজার ৫২৬ কোটি ইউরোতে, যা ২০২৪ সালে ছিল ১ হাজার ৩৪৮ কোটি ইউরো। রপ্তানি পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও গড় ইউনিট মূল্য কমেছে ২ দশমিক ০৬ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ধরে রাখার পাশাপাশি, ক্রেতারাও আস্থা বজায় রেখেছে। ফলে মোট বাজার অংশীদারি আরও বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া সবারই রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইউরোপের অন্যান্য প্রধান সরবরাহকারী দেশের অবস্থানও একই প্রবণতার প্রতিফলন। যেমন চীনের রপ্তানির পরিমাণ ১ হাজার ৯৭৭ কোটি ইউরো। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। পরিমাণের দিক থেকে বেড়েছে ১৭ শতাংশ। তবে ইউনিট মূল্য কমেছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। ভারতের রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭৬ কোটি ইউরো। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৬২ শতাংশ। পরিমাণে প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ০১ শতাংশ। ইউনিট মূল্য কমেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ২৯০ কোটি ইউরো। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। পরিমাণে বেড়েছে ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে ইউনিট মূল্য কমেছে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। একইভাবে কম্বোডিয়ার রপ্তানির ৩৩৭ কোটি ইউরো, প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৫১ শতাংশ। পরিমাণ বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ইউনিট মূল্য কমেছে ১২ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই সময়ে তুরস্কের পোশাক রপ্তানি ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ কমেছে ইউরোপে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বল বাজার পরিস্থিতির কারণে কম্বোডিয়া ইউরোপমুখী কৌশলে আরও আক্রমণাত্মক হয়েছে। এশিয়া এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল পোশাক সরবরাহ কেন্দ্র, তবে এই প্রবৃদ্ধি টিকে আছে কম দামের ওপর নির্ভর করে। সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধির চিত্রতে সেটাই দেখা যায়।
প্রায় সব দেশের ইউনিট মূল্য কমে যাওয়ার অর্থ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উৎপাদকদের মূল্য হ্রাসের চাপে ইউরোপের ব্র্যান্ডগুলো কস্ট-সেভিং কৌশল নেওয়ায় সরবরাহকারীরা আরও কম দামে সরবরাহ করতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে মোট বাজার প্রবৃদ্ধি থাকলেও মুনাফার মার্জিন সংকুচিত হচ্ছে যা উৎপাদক দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদে উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউরোপে পোশাক সরবরাহকারী দেশগুলোর সামগ্রিক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবাই পরিমাণ বাড়াচ্ছে এবং দাম কমাচ্ছে। ফলে বাজার অংশীদারি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা এখন আগের চেয়ে বেশি। গ্লোবাল অ্যাপারেল ট্রেড এখনো রিকভারি পর্যায়ে রয়েছে, কিন্তু বাড়তি চাহিদার ফল হিসেবে উৎপাদকরা মুনাফা বাড়াতে পারছে না।