বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন- আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে, ১ কোটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। কৃষকদের ন্যায্যমূল্যে সার-বীজ দেওয়ার জন্য ফার্মার্স কার্ড দেওয়া হবে। আমাদের নির্বাচিত করা হলে ইনশাল্লাহ আমরা পানির ন্যায্য হিস্সা পাব।
গতকাল বিকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে পদ্মার ন্যায্য পানি বণ্টনের দাবিতে বিএনপি আয়োজিত ‘চলোজি ভাই হাঁরঘে পদ্মা বাঁচাই’ শীর্ষক গণ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হারুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী মহানগর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ প্রমুখ। এর আগে দুপুরে বিএনপি মহাসচিব চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত রাবারড্যাম পরিদর্শন করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯৭৬ সালে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী ফারাক্কা অভিমুখে মার্চ করেছিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই দেশের স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান পদ্মার পানি হিস্সা নিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রথম পানি চুক্তি করেছিলেন ১৯৭৭ সালে। তারপরই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া জাতিসংঘে পদ্মার পানির ন্যায্য হিস্সার কথা তুলেছিলেন। পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৯৯৬ সালে একটি চুক্তি করেছিল। কিন্তু তার গ্যারান্টি ছিল না, যা আগামী বছর শেষ হবে। আমি জানি না ভারত কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না?
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০২৬ সালে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন হতে হবে- এই নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এ নির্বাচন যত দেরি হচ্ছে বাংলাদেশ তত দুর্বল হচ্ছে। জনগণের সমর্থন ছাড়া কোনো সরকারই সফলতার সঙ্গে দেশ চালাতে পারে না। এখন বিদেশ থেকে কোনো বিনিয়োগ আসে না। তারা বলছে আগে নির্বাচিত সরকার চাই। তাই আমি বলতে চাই শুধু বিএনপি নয় সারা দেশের মানুষ এখন নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, এই যে নতুন প্রজন্ম আছে তাদের শক্তিশালী স্বাধীন ও স্বার্বভৌম রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। ভারত পাশে আছে পানি বন্ধ করে দেবে, সীমান্তে মানুষ হত্যা করবে, তারা আমাদের যখন তখন চাল বন্ধ করে দেবে, পিঁয়াজ বন্ধ করে দেবে এমন দাদাগিরি আমরা আর দেখতে চাই না। আমরা দেখতে চাই ভারত আমাদের সঙ্গে সমান মর্যাদা দেবে, আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে। অন্যথায় ভারত কখনো বাংলাদেশের মানুষকে বন্ধু হিসেবে পাবে না। এ সময় তিনি বিএনপির প্রার্থীকে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে বলেন, এর আগে কত ভোট পেয়েছে জামায়াতে ইসলাম- ৫-৬ পার্সেন্ট ভোট পেয়েছে। কিন্তু (এবার) আপনাদের ৫১ পার্সেন্ট করে দেবে- এটা মনে করিয়েন না। বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের সহজে ভোট দেবে না। কারণ আপনাদের তারা বিশ্বাস করে না। আপনারা ৭১ সালে পাকিস্তান সেনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এদেশের মানুষকে গণহত্যা করেছেন। আমি এসব কথা বলতে ভয় পাই না। কারণ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমি এদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুদ্ধ করেছি। আজকে আপনারা আবোল-তাবোল কথা সোশ্যাল মিডিয়াতে বলে আমাদের মাথা নোয়াতে পারবেন না।
একটা দল বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘একটা দল বিএনপিতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা ফায়দা নিতে চায়।’ এ অবস্থায় তিনি নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিভাজন সৃষ্টি করা যাবে না।’
গতকাল রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের কবর জিয়ারত শেষে সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই শরিফ উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলসহ দলীয় নেতা-কর্মীরা।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিনকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁর পক্ষে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আরেকটা দল ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা বলে এদের দ্বারা দেশের পরিবর্তন ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।’ তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার আমিনুল হক এমপি ও মন্ত্রী থেকে এ এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবার এ আসনে ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই শরিফ উদ্দিনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে তাঁর পক্ষে কাজ করতে হবে।’