যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থি তৎপরতায় লিপ্ত এবং সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি হিসেবে বিবেচিত ৮০ হাজার বিদেশীর নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা বাতিল করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত ১০ মাসে বাতিল করা এসব ভিসার মধ্যে ৮ হাজার ছিল স্টুডেন্ট ভিসা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিনিয়র এডভাইজার স্টিফেন মিলার ১৭ নভেম্বর ফক্স নিউজকে বলেছেন, নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার পাশাপাশি গ্রীণকার্ড বাতিল, এমনকি সিটিজেনশিপ কেড়ে নেয়ার ঘটনা অব্যাহত থাকবে। কারণ, যারা চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই এবং দুর্বৃত্তপনায় লিপ্ত অথবা নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালায়-তারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবে না। ইসরায়েলের মত বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে বা ষড়যন্ত্র চালায় তাদের ভিসা (ইমিগ্র্যান্রট/নন-ইমিগ্র্যান্ট)ও বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাড়িয়ে দেয়ার চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তান, ইরান, বার্মা, সুদান, ইয়েমেনসহ ১২ রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে গত জুনে। এছাড়া কিউবা, ভেনিজুয়েলা, তুর্কেমিস্তান-সহ আরো ৭ রাষ্ট্রের নাগরিকদের ভিসা ইস্যুতে বিশেষ সতর্কতা জারি হয়েছে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পলিসিকে কঠোর একটি নিয়মের মধ্যে আনার পরও নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়ায় অভিবাসীগণের কঠোর শ্রমে গড়া আমেরিকা এখোন অপরিচিত মনে হচ্ছে অনেকের কাছে। বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতায় চ্যাম্পিয়ন বলে দাবিকারি আমেরিকায় এখন কথা বলতেই শুধু নয়, সোস্যাল মিডিয়ায় মতামত ব্যক্ত করতেও অনেকে দ্বিধায় পড়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নানা পদক্ষেপের সাথে সাংঘর্ষিক বিবেচিত হলেও ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটছে। ইতিমধ্যেই অনেকের গ্রীণকার্ড বাতিল এবং সিটিজেনশিপ কেড়ে নিয়ে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘটনার কথাও স্বীকার করেছেন স্টিফেন মিলার।
১৭ নভেম্বর স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন মুখপাত্র গণমাধ্যমে বলেছেন, ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া সত্বেও যারা অবস্থান করছিলেন এবং যারা চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই, খুন-রাহাজানির সাথে জড়িয়ে পড়েছে তাদেরকে গ্রেফতারের অভিযান আরো বাড়ানো হবে। এমনকি অনেক নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারী নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালাচ্ছে, দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে-তারাও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার হারিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার স্বার্থে এসব করা হচ্ছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে সম্পর্ক থাকা ভিসাধারীদেরকেও খোঁজা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে তাদেরকে বহিষ্কারের অভিযানও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা হবে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ মাসে ১৬ হাজার নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে নেশাগ্রস্ত ড্রাইভিংকালে গ্রেফতারের পর। ১২ হাজার ভিসা বাতিল করা হয়েছে খুনের সাথে জড়িত থাকায়। আর চুরির দায়ে গ্রেফতার হওয়া ৮ হাজার জনের ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, গত জানুয়ারির ২০ তারিখে ক্ষমতা গ্রহণের পরই ট্রাম্প প্রশাসন অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান শুরু করেছে এবং এটি ছিল তার অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গিকার। স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র টমি পিগোট এ প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম-এক্স এ লিখেছেন, যেসব বিদেশী আমাদের আইনকে তোয়াক্কা করে না কিংবা যারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে হুমকি তাদের ভিসা বাতিলে ট্রাম্প প্রশাসন বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছে না।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল