প্রয়োজনের সময় বড় ছক্কা মারতে পারছেন না। বহুদিন ধরে এমন অভিযোগ টাইগার ক্রিকেটারদের বিপক্ষে। বিশেষ করে টি-২০ ক্রিকেট যেখানে চার-ছক্কার ম্যাচ, সেখানে টাইগার ব্যাটারদের কালেভদ্রে দেখা যায় প্রতিটি ইনিংসটি ৭-৮ করে ছক্কা হাঁকাতে। অথচ ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটাররা বড় বড় ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছক্কা মারার টেকনিক শেখাতে পাওয়ার হিটিং কোচ হিসেবে বিসিবি নিয়োগ দিয়েছে জুলিয়ান উডকে। যিনি ক্রিকেটারদের শেখাবেন উইকেটের চারদিকে কীভাবে ছক্কা মারতে হয়। উড ঢাকায় এসেছেন তিন দিন আগে। এসে নারী ক্রিকেটার ও স্থানীয় কোচদের পাওয়ার হিটিং করতে হয় কীভাবে, সেই টেকনিক কাগজে-কলমে শিখিয়েছেন। গতকাল লিটন বাহিনীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিয়েছেন। তার যোগদান দিয়ে টাইগারদের টি-২০ এশিয়া কাপের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হলো। মিরপুর স্টেডিয়ামে আজ থেকে ব্যাটিং, বোলিং করবে লিটন বাহিনী। মিরপুরে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত অনুশীলন করে টাইগাররা উড়ে যাবেন সিলেট।
এশিয়া কাপ শুরু ৯ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশের এশিয়া কাপ মিশণ শুরু ১১ সেপ্টেম্বর হংকং ম্যাচ দিয়ে। এশিয়া কাপের আগে অবশ্য সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে খেলবে ৩ ম্যাচ টি-২০ সিরিজ। ম্যাচ তিনটি ৩০ আগস্ট, ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর। লিটন বাহিনী এরপর ৬ সেপ্টেম্বর উড়ে যাবে আবুধাবী। সেখানে ‘বি’ গ্রুপের ৩টি ম্যাচ খেলবেন লিটনরা। ১১ সেপ্টেম্বর হংকং, ১৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা ও ১৬ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ।
ছক্কা হাঁকানোয় সবচেয়ে বড় সমস্যা টাইগার ক্রিকেটারদের টেকনিকের। টি-২০ ক্রিকেটের ৬ ওভারের পাওয়ার প্লেতে অন্য দলগুলো যেখানে ৬০, ৭০, ৮০ রান করছে অনায়াশে। সেখানে টাইগার ক্রিকেটাররা ৫০-৬০ রানের মধ্যেই ঘোরাফেরা করছেন। এ ছাড়া আরেকটি সমস্যা হচ্ছে, ডট বল। প্রতিটি ম্যাচ শেষে কাটাছেঁড়া করে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ইনিংসে ব্যাটাররা ডট দিচ্ছে ৩৫-৪০ শতাংশ। এসব অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য জুলিয়ান উডের নিয়োগ। তিনি নেদারল্যান্ডস সিরিজ পর্যন্ত কাজ করবেন। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকা ছাড়বেন। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মূলত হেড কোচ ফিল সিমন্সের আগ্রহে। উডের বিষয়ে বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদীন ফাহিম বলেন, ‘টি-২০ ক্রিকেটে যারা পাওয়ার ক্রিকেট খেলতে পারেন, তারাই পাওয়ার হিটিংয়ের সুবিধা পাবেন। এ জায়গায় আমাদের ঘাটতি রয়েছে। যদিও আমাদের ক্রিকেটাররা এখন যথেষ্ট উন্নতি করেছে ছক্কা মারায়। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া অন্যরা যে বড় বড় ছক্কা মারছেন, তেমন নয়। আমাদের এই জায়গায়টায় উন্নতির সুযোগ রয়েছে।’
১৯৮৪ সাল থেকে এশিয়া কাপ হচ্ছে। সর্বশেষ ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতিটি আসরেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ১৫ আসরে অংশ নিয়ে রানার্স আপ হয়েছে ৩ বার, ২০১২, ২০১৬ ও ২০১৮ সালে। ২০১২ ও ২০১৬ সালে রানার্স আপ হয়েছিল ঘরের মাটিতে। ২০১৮ সালে রানার্স আপ হয়েছিল দুবাইয়ে। টি-২০ ফরম্যাটে এশিয়া কাপ এর আগে হয়েছে ২০১৬ ও ২০২২ সালে। ১৬ সালে রানার্স আপ হলেও ২২ সালে গ্রুপ পর্ব টপকাতে পারেনি। এবার তৃতীয়বার হবে টি-২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপ। ২০ ওভারের ফরম্যাটের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে, মূলত টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে টি-২০ বিশ্বকাপ। সেটার জন্যই মূলত এ আসর। এশিয়া কাপে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ম্যাচ খেলেছে ৪৮টি। জয় সাকুল্যে ৯টি এবং হার ৩৯টি। আসরের শিরোপা জিতেছে ৩টি দল ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। ভারত সবচেয়ে বেশি আটবার, শ্রীলঙ্কা ছয়বার এবং পাকিস্তান দুবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। টি-২০ ফরম্যাটের দুটি আসরে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ৭টি। জয় ৩টি ও হার ৪টি। ১০টি করে ম্যাচ খেলেছে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। জয় ভারত ৮, শ্রীলঙ্কা ৬ ও পাকিস্তান ৫টি।
লিটন বাহিনী এবার টি-২০ এশিয়া কাপে অংশ নেবে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টি-২০ সিরিজ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়ে।