জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে শেষ মুহূর্তে চলছে কাটাছেঁড়া। বেশ কিছু বিষয়ে আনা হচ্ছে সংশোধনী। এরপরই পাঠানো হবে মতামত দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। এজন্য আরও কয়েক দিন সময় নিতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ প্রসঙ্গে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জুলাই সনদের খসড়ার কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনা হচ্ছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে। এর মধ্যে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছি। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বিভিন্নভাবে আলোচনা হবে। এরই মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় পিছিয়ে যাচ্ছে। বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এর আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না পেলে তাতে তারা সই করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আইনি ভিত্তির পথ খুঁজতে গিয়ে সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব করেছেন অনেকে। কিন্তু অধ্যাদেশ জারি করে সংবিধান সংশোধনের সুযোগ নেই। ফলে এ নিয়ে নতুন জটিলতায় পড়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। জটিলতা নিরসনে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি লিখিত মতামত গ্রহণ করছে। একই সঙ্গে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে আগামী সপ্তাহে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হবে। ফলে নির্ধারিত সময় ১৫ আগস্টের মধ্যে সনদ সই সম্ভব হচ্ছে না। তাই গত ১১ আগস্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এদিকে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশের মধ্যে ইতোমধ্যে ৩৭টি বাস্তবায়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া ১০টি সংস্কার কমিশনের যেগুলো আশু সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো নিয়ে বৃহস্পতিবার আবার একটা বড় আলোচনা হয়েছে। গত সপ্তাহে আমরা বলেছিলাম যে, ১২১টি সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন। আজকে জানানো হয়েছে, আরও ২৪৬টি অতি গুরুত্বপূর্ণ আশুকরণীয় রিফর্ম এসেছে। এগুলো বাস্তবায়নাধীন, এটা জানানো হয় ক্যাবিনেটকে। মোট হচ্ছে ৩৬৭টি। এর মধ্যে ৩৭টি অলরেডি বাস্তবায়ন বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২৪৬টি আশু সুপারিশের মধ্যে শ্রম বিভাগের ৮২টি সুপারিশ রয়েছে। শ্রম উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, তার ৮২টির মধ্যে অনেকগুলোই ফাইনাল পর্যায়ে রয়েছে। কিছু কিছু অলরেডি বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, নারী কমিশনের ৭১টি আশু বাস্তবায়নের জন্য লিস্ট করা হয়েছে। এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের ৩৭টি, স্বাস্থ্যের ৩৩টি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের ২৩টি। মোট ৩৭টি সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে। আংশিক বাস্তবায়িত ১৪টি। এখনো ৩১৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি গঠিত সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু করে। ছয় মাস মেয়াদের এই কমিশনের মেয়াদ ১৫ আগস্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্ধিত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে প্রথম পর্বের সংলাপে ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ঐকমত্যে পৌঁছানো ৬২টি বিষয়, দ্বিতীয় পর্বে গুরুত্বপূর্ণ ১৯টি সাংবিধানিক বিষয়ে নোট অব ডিসেন্টসহ গৃহীত সিদ্ধান্ত এবং পটভূমি ও অঙ্গীকার যুক্ত করে সমন্বিত খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে; যা গত বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া খুঁজতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি নির্ধারণে এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন। গত ১০ আগস্ট জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এলডি হলে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। তাঁদের কাছ থেকে সরাসরি পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি লিখিত মতামত চাওয়া হয়েছে।