আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুলপ্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকটি বাংলাদেশ সময় গত রাত ১টায় (স্থানীয় সময় গতকাল বেলা ১১টায়) শুরু হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠকের বিস্তারিত জানা যায়নি।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে আলাস্কার উদ্দেশে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন ট্রাম্প এবং একই দিন বিকাল ৫টা ৪৫ মিনিটে বৈঠক শেষে অ্যাঙ্কোরেজ ত্যাগ করবেন তিনি। আজ ভোরে তাঁর হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার কথা। এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের জন্য আলাস্কার উদ্দেশে রওনা হয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন রাশিয়ার মাগাদানে যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় তিনি সেখানে ওমেগা-সি প্ল্যান্ট, প্রেসিডেন্সিয়াল স্পোর্টস কমপ্লেক্স, মায়াক পার্ক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া তিনি নিহত বীর পাইলটদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলিও অর্পণ করেন। পরে অঞ্চলটির প্রধান সের্গেই নোসভের সঙ্গে পুতিন বৈঠক করেন। পরে বৈঠকের জন্য আলাস্কার পথে রওনা হন। আলাস্কা বৈঠক নিয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈঠকে কী ফলাফল আসবে তার ওপর নির্ভর করবে শেষ হাসি কার হবে। তাঁদের মতে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নয়, বরং শান্তি আলোচনার মাধ্যমে রুশ প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের সূচনা করতে চান। ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত বন্ধ করা হলেও আপাতত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছেন পুতিন। বিশ্লেষকদের ধারণা, এ বৈঠকের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থেকে বের হওয়ার সুযোগ খুঁজছে মস্কো। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞার কবল থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের প্রস্তাবও দিতে পারেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের স্বার্থে ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের প্রস্তাব আমলে নিতে পারেন পুতিন। সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, আলাস্কার এ বৈঠক আপাতদৃষ্টে শান্তি আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করলেও বৈঠকটি ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ এবং আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্যের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য টাইমস বলেছে, রাশিয়ার দেওয়া শর্ত মেনে নেওয়া হলেই কেবল ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠকের পর ইতিবাচক ফল আসবে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, যুদ্ধে মস্কোর সুবিধাজনক অবস্থান নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একচুলও ছাড় দেবে না রাশিয়া। গণমাধ্যমটির মতে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর মডেলে ইউক্রেনের অঞ্চল দখলের রুশ-মার্কিন পরিকল্পনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মূল্যায়ন অনুযায়ী রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগের মতোই সর্বোচ্চ ভূখ দখলের লক্ষ্যেই আছেন এবং যুদ্ধবিরতিকে শুধু বাহিনী পুনর্গঠনের সুযোগ হিসেবে দেখছেন। আরেক কর্মকর্তা মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট এরই মধ্যে নিজেকে বিজয়ী হিসেবে ভাবছেন। নিজের সুবিধা ছাড়া একচুলও ছাড় দেবেন না তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের নেতারা একদিকে আলাস্কার বৈঠক থেকে ইতিবাচক ফল আসতে পারে বলে মনে করছেন, আবার অন্যদিকে ভয় পাচ্ছেন ইউক্রেনে দখলকৃত অঞ্চল ভাগাভাগির শর্ত দিতে পারেন পুতিন। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ট্রাম্প কোন দিকে ঝুঁকবেন তা স্পষ্ট নয়।
যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হলে কঠিন পরিণতি : ট্রাম্প
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগমুহূর্তে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘পুতিন যদি যুদ্ধ বন্ধে রাজি না হয় তাহলে রাশিয়াকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ গতকাল সকালে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করতে আলাস্কায় যাওয়ার পথে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’ উড়োজাহাজে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় সকাল ৮টার কিছুক্ষণ আগে সফরসঙ্গীদের নিয়ে উড়োজাহাজে চড়েন তিনি।
বৈঠক ফলপ্রসূ হবে, চলতে পারে ৬-৭ ঘণ্টা : ক্রেমলিন
ভ্লাদিমির পুতিন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে আলাস্কার বৈঠকটি ফলপ্রসূ হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে এটি অন্তত ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা চলতে পারে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। গতকাল রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল ওয়ানকে বলেন, ‘আপনি ধরে নিতে পারেন এটি (বৈঠক) ন্যূনতম ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা চলবে।’