দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতুর গোলচত্বরটি এখন অলিখিত বাসস্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। সড়ক দখল করে এই স্ট্যান্ড করার কারণে নগরীর প্রবেশমুখে প্রতিদিনই জনসাধারণের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে এখানে যানজটও স্থায়ী রূপ নিয়েছে। একই সঙ্গে স্ট্যান্ড ঘিরে চলছে চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়ম।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, সড়ক দখল করে কেন যানবাহন রাখতে হবে? যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও তারা কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে দখলদাররা। তবে সিএমপির ডিসি (ট্রাফিক-দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘সড়কের নৈরাজ্য সমাধানে আমরা কাজ করছি। কথা বললে তো কাজ হবে না। আমরা কথা না বলেই কাজ করছি।’
জানা গেছে, শাহ আমানত সেতুর শহীদ বশরুজ্জামান চত্বর এলাকাটি চার সড়ক সব সময় দখল করে রাখছে বিভিন্ন যানবাহন। বিশেষ করে নোমান কলেজসংলগ্ন রোডটি দখলে থাকে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলাচল করা বাস ঈগল, শ্যামলী, শাহ আমিনসহ বিভিন্ন রুটের বাসে। নির্ধারিত স্ট্যান্ড ছাড়াই সড়কের ওপর বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে। একইভাবে শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে চাক্তাই সড়ক ও বহদ্দারহাটমুখী সড়ক দখলে রেখেছে অটো টেম্পো, মাহিন্দ্রাসহ নানা পরিবহন। এই দখদারির পাশাপাশি চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ফলে পুরো চত্বর পরিণত হয়েছে বিশৃঙ্খলার মোড় হিসেবে। জানা গেছে, যেসব যানবাহন এই কাণ্ড করছে সেগুলোর বেশির ভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ ও অননুমোদিত। এসব গাড়ির নেই ফিটনেস, নেই বৈধ কাগজপত্র, চালকদেরও নেই লাইসেন্স। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা আর যাত্রী নিরাপত্তা পড়ে যাচ্ছে হুমকিতে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ট্রাফিক পুলিশ বাধা দিলে হেলপার-চালকেরা মারমুখী আচরণ করে। ফলে নিজেদের আত্মসম্মান বাঁচাতে অনেক সময় নীরব ভূমিকা পালন করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আবার কখনো এসব পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে রাজনৈতিক চাপ আসছে প্রশাসনের কাছে। বিগত সময়ে পরিবহন খাতের এসব আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা নিয়ন্ত্রণ করলেও সরকার পরিবর্তনের পর তা এখন দখল করেছে অন্য দলের নেতারা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে চালক-হেলপাররা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে সৃষ্টি করছে এ ধরনের অরাজকতা। এ রুটের নিয়মিত যাত্রী রিয়াজুদ্দীন বাজারে বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, পুরো শহরের কোথাও যানজট না থাকলেও নতুন ব্রিজের এ পারে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। চারপাশে অবৈধ যানবাহন সড়কের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে না। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার তো আরও বেশি ভোগান্তি হয়। বৃহস্পতিবার যানজটে পুরো এলাকা ছড়িয়ে পড়ে। আবার শুক্রবার এলে তেমন কোনো গাড়িই পাওয়া যায় না। পেলেও তা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাশাপাশি কক্সবাজার ও বান্দরবানমুখী হাজার হাজার মানুষ এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।