প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর এ ঘোষণায় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার অবসান ঘটল। সরকারকে ব্ল্যাকমেলে ফেলে নিজেদের দাবি আদায়ের অপকৌশল বেছে নিয়েছিল কোনো কোনো রাজনৈতিক দল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ কঠিন মুহূর্তে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছুতে জনগণের আগ্রহ নেই। যারা গণভোট আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানের হুমকি দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এতে ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ বছর আলুচাষিদের ক্ষতিও এই পরিমাণ অর্থ। গণভোটের চেয়ে উৎপাদিত আলুর ন্যায্যমূল্য পাওয়াটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির শীর্ষনেতার মন্তব্য খুবই প্রাসঙ্গিক ও তাৎপর্যপূর্ণ। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রতি দেশের সিংহভাগ মানুষের শ্রদ্ধা রয়েছে। কিন্তু এ গণ অভ্যুত্থানকে কেউ তাদের মতলব পূরণের পথ হিসেবে বেছে নিলে সেটি হবে গর্হিত ও আপত্তিকর। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, ১৫ মাস ধরে সে প্রয়াসই চলছে। দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক সরকারের প্রত্যাশায় জুলাই গণ অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমেছিল। তাদের ঘাড়ে চেপে বসা সিন্দাবাদের দৈত্যরূপী স্বৈরাচার উপড়ে ফেলেছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত ছিল ক্ষমতায় এসে অযথা সময় ব্যয়ের বদলে প্রথমে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা। সে পথে না গিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নামে মতানৈক্য সৃষ্টির যে কাঠামো তারা প্রশ্নবিদ্ধ লোকদের নেতৃত্বে গড়ে তুলেছিলেন জাতির কল্যাণের বদলে অশ্বডিম্ব প্রসবই শুধু নিশ্চিত করেছে। ঐকমত্য কমিশন তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে সর্বসম্মত বিষয়ের বদলে নিজেদের ইচ্ছা চাপিয়ে দেওয়ায় ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা দানা বেঁধে উঠেছিল। আশার কথা, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এর ফলে জন-ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা আশা করব, সংঘাত এড়াতে রাজনীতির সব পক্ষ সুনীতি ও সুবিবেচনার পথ বেছে নেবে। প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সংঘাত এড়ানোকে কর্তব্য বলে ভাববে।