ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি ছিল মাহমুদুল হাসান জয়ের। ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফ সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল হকের। দুজনেই ব্যর্থ। সিলেট টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুর ১৯ বলের মধ্যে ফিরে গেছেন দুজনে। দ্বিতীয় দিনের দুই নায়কের দ্রুত বিদায়ের পর তৃতীয় দিনটিকে নিজের করে নেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। টাইগার অধিনায়ক সিলেটের কুয়াশাভেজা তৃতীয় দিনে আলো ছড়িয়েছেন। করেছেন সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরি করেছেন এমন এক সময়ে, যখন নতুন করে আলোচনায় এসেছেন তিনি। গত জুনে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন নাজমুল। এরপর হঠাৎ তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়কের নীরব প্রতিবাদে টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়ে দেন। ধারণা করা হচ্ছিল, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে নতুন কাউকে নেতৃত্বে দেখা যাবে। বিসিবি নতুন কারও হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে রাজি হয়নি। সেজন্য নাজমুলের অভিমান ভাঙান বিসিবির সহসভাপতি ফারুক আহমেদ। অভিমান ভুলে ফের টাইগারদের টেস্ট অধিনায়কের দায়িত্ব নেন নাজমুল এবং নেতৃত্ব নিয়েই সেঞ্চুরি
করেন। তার সেঞ্চুরির দিনে সিলেট টেস্টে চালকের আসনে বসে পড়েছে বাংলাদেশ। ইনিংস ব্যবধানে জয়ের জন্য আজ মাঠে নামবে নাজমুল বাহিনী। ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে আয়ারল্যান্ডের দরকার ২১৫ রান এবং টাইগারদের চাই ৫ উইকেট।
১ উইকেটে ৩৩৮ রান করে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। ১৬৯ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদুল এবং ৮০ রানে অপরাজিত ছিলেন মুমিনুল। ডাবল সেঞ্চুরির হাতছানি থাকার পরও ব্যর্থ হয়েছেন মাহমুদুল। মাত্র ২ রান যোগ করে ব্যক্তিগত ১৭১ রানে সাজঘরে ফেরেন। মুমিনুলও ব্যর্থ হয়েছেন সেঞ্চুরি তুলে নিতে। দুজনে ব্যর্থ হলেও দিনের উজ্জ্বল তারকা নাজমুল তার ৩৮ টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন। ১০০ রানের ইনিংসটি
খেলেন ১১৪ বলে ১৪ চারে। চলতি বছর এটা টাইগার অধিনায়কের তৃতীয় সেঞ্চুরি। অধিনায়ক হিসেবে ১৫ টেস্টে চার নম্বর। গত জুনে গলে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ড্র টেস্টের উভয় ইনিংসে খেলেছিলেন ১৪৮ ও ১২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস। ব্যর্থ হয়েছিলেন কলম্বোয়। উভয় ইনিংসে তার রান ছিল ৮ ও ১৯। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দুই টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি রয়েছে টাইগার অধিনায়কের। প্রথমবার ২০২৩ সালে মিরপুরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৪৬ ও ১২৪ রান করেছিলেন। এরপর চলতি বছরের জুনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৪৮ ও অপরাজিত ১২৫ রান। দ্বিতীয় দিন মাহমুদুল অপরাজিত থেকে দু-দুটি শতরানের জুটি গড়েছিলেন। উদ্বোধনী জুটিতে ১৬৮ রান করেছিলেন বাঁ-হাতি ওপেনার সাদমান ইসলামের সঙ্গে। দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুলের সঙ্গে ১৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছিলেন। গতকাল জুটির সমাপ্তি হয় ১৭৩ রানে। মাহমুদুল ১৭১ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন ২৮৬ বলে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায়। মাহমুদুলের বিদায়ের ৫ রান পর সাজঘরে ফেরেন মুমিনুল। সাবেক টেস্ট অধিনায়ক ৮২ রানের ইনিংস খেলেন ১৩২ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায়। দুজনের বিদায়ের পর নাজমুল ৭৯ রানের জুটি গড়েন ৯৯ নম্বর টেস্ট খেলতে নামা মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে। ২৩ রান করেন সাবেক অধিনায়ক মুশফিক। পঞ্চম উইকেট জুটিতে টি-২০ অধিনায়ক লিটন দাসের সঙ্গে ৯৮ রান যোগ করেন নাজমুল। লিটন ৬০ রান করেন ৬৬ বলে। নাজমুলের সেঞ্চুরির দিনে ৮ উইকেটে ৫৮৭ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে এটা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। সব মিলিয়ে দলগত তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর এটি। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দলগত সর্বোচ্চ ইনিংস শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে ২০১৩ সালে। সেবার মুশফিকের ২০০ রান ও জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৯০ রানে ভর করে ৬৩৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাটিতে এর আগে সর্বোচ্চ দলগত স্কোর ছিল ২০২০ সালে। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৫৬০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল টাইগাররা।
৩০১ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে সফরকারী আয়ারল্যান্ড। ৮৬ রান তুলতে উইকেট হারায় ৫টি। বাংলাদেশের ১০৮তম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ২ উইকেট নিয়েছেন হাসান মুরাদ। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন নাহিদ রানা ও তাইজুল ইসলাম। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এটা তাইজুলের ৫০০তম উইকেট। তার চেয়ে উইকেট শিকারে এগিয়ে এনামুল জুনিয়র ৫১৩ ও আবদুর রাজ্জাক ৬৩৪টি।