হামজা দেওয়ান চৌধুরী বলটা বাতাসে দেখে সময় আর অবস্থানের অঙ্কটা মুহূর্তের মধ্যেই কষে নেন। গাণিতিক হিসেবে লাফিয়ে উঠে বাইসাইকেল কিক নেন। নিখুঁত টাইমিংয়ের এই বাইসাইকেল কিকটাই আনন্দের জোয়ার এনে দেয় ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। হতাশার ধুলো ঝেরে নিয়ে নতুন করে স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেন ফুটবলপাগল দর্শকরা। নেপালের বিপক্ষে জোড়া গোল করেন তিনি। তারপরও শেষ মুহূর্তে অনন্ত তামাংয়ের গোলে নেপাল হার ঠেকিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
ম্যাচের শুরুতে ছন্দহীন বাংলাদেশ। দর্শকরা ছিলেন হতাশ। তার ওপর ২৮ মিনিটে নেপালের রোহিত চাঁদের গোলে পিছিয়ে পড়েন জামাল ভূঁইয়ারা। দ্বিতীয়ার্ধের শেষ মুহূর্তে একটা গোলের সুযোগ পেলেও তালগোল পাকিয়ে সুযোগ হারান ফাহিম। তবে হামজার ম্যাজিক তখনো বাকি। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে সোহেল রানা জুনিয়রকে তুলে নিয়ে সামিতকে মাঠে নামান কোচ কাবরেরা। দলে পরিবর্তন আনার পর পরই ফল পেয়ে যান কোচ। সামিতের দ্রুত গতি নেপালের ডিফেন্স লাইন ভেঙে দেয়। ৪৭ মিনিটে জামালের ক্রসে ডি বক্সে বল পেয়ে বাইসাইকেল কিকে গোল করেন হামজা চৌধুরী।
পরের মিনিটেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান লঙ্কান রেফারি কসুন লাকমাল। ডি বক্সে রাকিবকে পেছন থেকে ল্যাঙ মেরে ফেলে দেন নেপালি ডিফেন্ডার। পেনাল্টির বাঁশি বাজতেই অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া ফুটবল তুলে দেন হামজার হাতে। স্পটকিক থেকে পানেনকা শটে গোল করেন হামজা। পানেনকা হলো এমন এক শট, যেখানে ফুটবলার গোলরক্ষক বরাবর হালকা শটে বল জালে জড়ান। হামজা বিখ্যাত সেই পদ্ধতিটাই কাজে লাগালেন। ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ার পর দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা স্টেডিয়ামে চতুর্থ গোল করলেন হামজা। এর আগে ভুটান ও হংকং চায়নার বিপক্ষে একটি করে গোল করেন লেস্টার সিটির এ তারকা ফুটবলার। ম্যাচের ৭০ মিনিটে হৃদয় ও ইমন মাঠে নামেন সোহেল রানা সিনিয়র ও ফাহিমের স্থানে। ম্যাচের ৮০ মিনিটে হামজার পরিবর্তে মাঠে নামেন বসুন্ধরা কিংসের তরুণ তারকা কিউবা মিচেল। হামজা হঠাৎ করেই মাঠে বসে পড়েন। তাকে দেখতে চিকিৎসক ছুটে যান। কিছু সময় কথা বলে হামজাকে মাঠ থেকে তুলে নেন কোচ। সামনেই ভারত ম্যাচ। সেই ম্যাচের জন্য কাবরেরা তার সেরা অস্ত্রের ব্যাপারে কোনো ঝুঁকিই নিতে চাননি। অবশ্য হামজার অবস্থা কতটা গুরুতর তা কেবল পরীক্ষার পরই জানা যাবে। হামজার পরিবর্তে অল্প সময় খেলেও মাঝ মাঠের দখলে বেশ ভূমিকা রাখেন মিচেল। হামজা উঠে যাওয়ার পর জয় ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হয়। নেপালের বিপক্ষে ২০২০ সালের ১৩ নভেম্বর ঢাকা স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেবার নাবিব নেওয়াজ জীবন ও মাহবুবুর রহমান সুফিল গোল করেন। এরপর থেকেই নেপালের বিপক্ষে জয়হীন ছিল বাংলাদেশ। এ সময়ের মধ্যে পাঁচ ম্যাচ খেলে দুটিতে হার ও তিনটিতে ড্র করেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। নেপালের বিপক্ষে পাঁচ বছর ও পাঁচ ম্যাচের পরও জয়ের দেখা পেল না বাংলাদেশ।
গত জুনে ভুটানের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের পর থেকেই ধুঁকছিল বাংলাদেশ। এরপর পাঁচটি ম্যাচ খেললেও জয়ের দেখা পেলেন না জামালরা। পাঁচ মাস ও পাঁচ ম্যাচ পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারলেন না কাবরেরা। মিতুল, তারিক, সাদ, তপু, জায়ান, সোহেল সিনিয়র, সোহেল জুনিয়র, রাকিব, ফাহিম, জামাল ও হামজাকে নিয়ে একাদশ সাজান তিনি। প্রথমার্ধটা অগোছাল হলেও দ্বিতীয়ার্ধে কয়েকটা পরিবর্তন এনে সামলে নেন কাবরেরা। তবু এলো না জয়।