তিস্তা নদী এবার গতি প্রকৃতি কিছুটা বদলিয়েছে। প্রতি বছর মধ্য জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত নদীপাড়ে বন্যা পরিস্থিতি থাকে। এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। অগস্টের ১০ দিনে খুব অল্প সময়ের জন্য বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে দুইদিন। এছাড়া গত কয়েকদিন থেকে পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে নদীর পানি রাত ৯টার পর বাড়ে। আবার সকাল ৬ টা থেকে পানি কমতে শুরু করে। এর মধ্যেও নদীর পাড় ভাঙছে। ফসলি জমি বসত ভিটা চলে যাচ্ছে নদী গর্ভে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত করে নদীপাড়ের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। বর্তমানে পানি কিছুটা কমলেও নদী ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজলার তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ।
কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের হাজীটারী গ্রামে ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে কয়েক একর আমন ধানের জমি। কৃষকেরা কয়েক সপ্তাহ আগেই জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলেন। চারাগুলো এখন সতেজ সবুজ রঙে ভরপুর, যা বাম্পার ফলনের আভাস দিচ্ছিল। কিন্তু ভাঙনের আশঙ্কায় কৃষকেরা বাধ্য হয়ে ধান কেটে গরুকে খাওয়াচ্ছেন।
স্থানীয় কৃষক আজমল হোসেন বলেন, দুই বছর আগেও নদী ছিল অনেক দূরে। পরিকল্পিত নদী শাসনের অভাবে প্রতিবছর ভাঙতে ভাঙতে এখন এত কাছে এসেছে যে, বহু আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। টেপামধুপুর ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম জানান, তার ইউনিয়নের রাজিব, হরিচরণ শর্মা, হয়বতখাঁ ও বিশ্বনাথ গ্রামে তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ভাঙন এলাকা ঘুরে দেখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৪-৫ হাজার জিওব্যাগ চেয়েছিলাম, কিন্তু বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২৫০টি।
কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিদুল হক বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ করবে।
এদিকে, গঙ্গচড়া উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নই তিস্তা নদী বেষ্টিত। এই উপজেলায় পানি কমা-বাড়ার কারণে কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, রবিবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৫২ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। অপরদিকে একই সময়ে কাউনিয়া পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ২৮ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ধরা হয় ২৯ দশমিক ১ সেন্টিমিটার। নদীর দুটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচে ছিল।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন