মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকারী বিমান দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে শনিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
হাসপাতালে পৌঁছে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিনের কাছ থেকে তিনি দুর্ঘটনার সার্বিক বিবরণ শুনেন এবং বর্তমানে ভর্তি থাকা রোগীদের চিকিৎসা অগ্রগতির খোঁজখবর নেন।
পরিচালক জানান, আহতদের চিকিৎসায় মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। আন্তর্জাতিক প্রটোকল অনুসারে রোগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং চিকিৎসা কার্যক্রমে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শও নেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীনদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা ক্রিটিক্যাল, ৯ জন সিভিয়ার এবং ২৩ জন ইন্টারমিডিয়েট পর্যায়ের বলে জানান তিনি। তবে তিনি বলেন, রোগীদের অবস্থা অনুযায়ী এই শ্রেণিবিন্যাস সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা চিকিৎসাসেবায় কোনো যন্ত্রপাতি বা ওষুধের ঘাটতি আছে কি না জানতে চাইলে পরিচালক জানান, সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করা হয়েছে। কিছু বিশেষ যন্ত্রপাতি সিঙ্গাপুর থেকে আগত চিকিৎসকরা সঙ্গে করে এনেছেন।
বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনার পর দগ্ধ রোগীদের প্রথমে নিকটবর্তী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে দ্রুত বার্ন ইনস্টিটিউট ও সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়। তবে রোগী স্থানান্তরের সময় অ্যাম্বুলেন্সের স্বল্পতা ছিল উল্লেখযোগ্য একটি সমস্যা। এই ঘটনায় জরুরি স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের পাঠানো, দেহাবশেষ শনাক্তকরণে ডিএনএ টেস্টের প্রয়োজনীয়তা—এসব কারণে হতাহতদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রধান উপদেষ্টা দ্রুত এসব সমস্যার সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি, নিহতদের পরিবার ও আহতদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে মানসিক কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। এতে আহতদের পরিবার, নিহতদের স্বজন এবং মাইলস্টোন স্কুলের সংশ্লিষ্টদেরও অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন।
এছাড়াও, হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীদের স্বজনদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও যত্নশীল আচরণ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমরা আন্তরিক এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।'
তিনি চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। একইসাথে, যারা বিদেশ থেকে এসে দুর্ঘটনার সময় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমও উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/মুসা