বরগুনার গুদিঘাটায় চাঞ্চ্যকর জোড়া খুনের আসামি ইলিয়াস পাহলানের ফাঁসি কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মামলার বাদীকে ধর্ষণচেষ্টা ও কুপিয়ে আহত করায় ১০ বছরের সাজা এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রবিবার বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক বেগম লাইলাতুল ফেরদৌস এ আদেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম ইলিয়াস পহলান (৩৪)। তিনি বরগুনার সদর উপজেলার আয়লা পাতাকাটার পূর্ব কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের আবুল হোসেন পহলানের ছেলে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি রনজুয়ারা শিপু। তিনি এ রায়কে একটি দৃষ্টান্তমূলক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এই রায় সমাজের অপরাধ কমিয়ে আনবে।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালে ৩ আগস্ট রাতে সদর উপজেলার ফুলঝুরি ইউনিয়নের রোডপাড়া গ্রামে ইলিয়াস পাহলান নিজ শ্যালিকাকে ধর্ষণ করার চেষ্টা করেন। ধর্ষণ করতে বাধা দিলে শ্যালিকাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন তিনি। এ সময় ঘরে থাকা ওই নারীর তিন বছরের শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করেন ইলিয়াস। একই সঙ্গে প্রতিবেশীর ১৩ বছরের এক শিশু ছেলেকেও কুপিয়ে হত্যা করে।
মামলার সূত্রে জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের রোডপাড়া গ্রামে নিজ শ্যালিকাকে দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল তার দুলাভাই ইলিয়াস। মা বাড়িতে না থাকায় ঘটনার দিন রাতে খাবার খেয়ে তিন বছরের শিশুকন্যা ও প্রতিবেশী এক শিশুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন ইলিয়াসের শ্যালিকা। এই সুযোগে গভীর রাতে ঘরে ঢুকে ইলিয়াস তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এতে বাধা দেন ওই নারী। একপর্যায়ে ঘরে থাকা দা উঁচিয়ে ইলিয়াসকে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন তিনি। এ সময় ইলিয়াস হাত থেকে দা কেড়ে নিয়ে তাকে কুপিয়ে জখম করে। পাশে ঘুমানো প্রতিবেশী শিশু জেগে উঠে ইলিয়াসকে বাধা দেয়। তাকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে ইলিয়াস। পরে ওই নারীর শিশুকন্যাকে কুপিয়ে সে বাড়ি ফিরে যায়।
সকালে প্রতিবেশীরা এক শিশুর মরদেহ এবং ওই নারী ও তার মেয়েকে জখম অবস্থায় দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে এবং মা ও শিশুকে বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
এদিকে, রাতে এ ঘটনার পর নিজ বাড়িতে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে ইলিয়াস। সকালে হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে অন্যদের সঙ্গে সেও ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার কথা স্বীকার করে।
বিডি প্রতিদিন/কেএ