টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অন্তত পাঁচটি স্পটে সাড়ে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে যে কোনো সময় গোটা এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিপুল পরিমাণ জমির ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছেন কৃষক। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব বেড়িবাঁধে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি মেরামত করলেও তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এক মাস ধরে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। চলছে নিম্নচাপের প্রভাব। জোয়ারের তোড় বাড়ছে। ভাঙছে নদীর তীর। বাঁধের সংস্কার না হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
জানা গেছে, উপজেলার নীলগঞ্জের গৈয়াতলা, বালিয়াতলীর চরবালিয়াতলী, চম্পাপুরের করমজাতলা ও দেবপুরে বেড়িবাঁধে ভাঙন চলছে। এ ছাড়া নিজামপুরে অন্তত পাঁচ শত মিটার বেড়িবাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েক দফা জোয়ারের পানির ঝাপটায় রাবনাবাদ পাড়ের করমজাতলার প্রায় এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধের রিভার সাইটসহ মূল বাঁধ ৮০ শতাংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাঁধের পাড়ের মানুষ চরম বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ওইসব এলাকার মানুষ তাদের সম্পদ রয়েছে দুর্যোগের ঝুঁকিতে।
এদিকে নদীর তীরে বেড়িবাঁধ না থাকায় দিনে দুই দফা জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে পশ্চিম লোন্দা গ্রামের টিয়াখালী নদী তীর সংলগ্ন এলাকার ২৫০টি পরিবারের বাড়িঘর। তলিয়ে যায় কৃষি জমি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বসতভিটা। তখন চলাচলের একমাত্র বাহন হয় ভেলা কিংবা নৌকা। ওই গ্রামের ৩ কিলোমিটার এলাকায় টেকসই রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে এ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে এসব মানুষ।
বালিয়াতলী ইউনিয়নের চরবালিয়াতলী গ্রামের মো, জনি মিয়াজী জানান, পানির তোড়ে জিও টিউব, জিওব্যাগসহ বাঁধের টপসহ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঢেউয়ের ঝাপটায় সব শেষ, এখন বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকছে। সবাই আতঙ্কে আছেন। যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় জামান হোসেন বলেন, রাতে ঘুম আসে না। প্রতি দিন ভয় নিয়ে থাকতে হয়। শুধু বাড়িই নয় গবাদি পশু ঝুঁকিতে আছে।
ওয়াটারকিপার্য বাংলাদেশের উপকূলীয় সমন্বয়ক মো, মেজবাহ উদ্দিন মান্নু বলেন, বেরিবাঁধটি পুরো উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহআলম জানান, এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে নদীর পশ্চিম তীরে ভাঙন প্রবণতা বেশি থাকে। এ কারণে রাবনাবাদ পাড়ের বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। করমজাতলায় ইতিপূর্বে জরুরি মেরামত করা হয়েছে কিন্তু টিকছে না। দেবপুরের বাঁধ মেরামত করার পরিকল্পনা রয়েছে। চরবালিয়াতলীতে জিওব্যাগ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।