বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া এখন অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী প্রশাসন এবং বেসরকারি খাত উভয়েই মত দিয়েছে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
জাতিসংঘের একটি স্বাধীন মূল্যায়ন দল বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছে এবং এলডিসি উত্তরণ প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার, বেসরকারি খাত, বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছে।
বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) আয়োজিত বৈঠকে সরকারি সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ করা হয় যেন এলডিসি উত্তরণ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারকে সময় দেওয়া হয়। ইআরডি সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারি সংস্থাগুলো জাতিসংঘ মিশনকে আরও অনুরোধ করেছে যেন তারা এমন কিছু সুপারিশ দেয় যা বাংলাদেশের বাণিজ্য ও ব্যবসার সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করে একটি মসৃণ ও টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক বৈশ্বিক ও স্থানীয় অনিশ্চয়তা, যেমন ‘ট্রাম্প ট্যারিফ’, জুলাইয়ের অস্থিরতা এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুর কারণে বিষয়টি এখন আরও জটিল হয়ে উঠেছে। তাই পরবর্তী রাজনৈতিক সরকারের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত বলে তাঁরা মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণের তিনটি মানদণ্ডেই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, তবে সাম্প্রতিক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলো আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।’ উল্লেখ্য, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে এ সময়সূচি পুনর্বিবেচনার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কভিড-১৯ মহামারির কারণে আগে বাংলাদেশের উত্তরণ দুই বছর পিছিয়েছিল জাতিসংঘ। এখন যদি আরও তিন বছর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়, তবে তার জন্য পরিষ্কার কারণ ও একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছে প্রতিনিধিদল।
এলডিসি উত্তরণ প্রস্তুতি মূল্যায়নের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ দলটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বেসরকারি খাত, শিক্ষাবিদ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের কাছে প্রশ্নমালা পাঠিয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করবে।