প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংশয় অনেকটা কেটে গেছে। জুলাই সনদের গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচনের দিনে গণভোট অনুষ্ঠানের বিষয়টিও চূড়ান্ত। এ অবস্থায় আপাতদৃষ্টিতে নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই। তবে জামায়াতে ইসলামী গণভোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছে। সবকিছু মিলে দেশবাসীর সামনে এখন শুধুই নির্বাচন। সারা দেশে নির্বাচনি ঢেউ শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক দলের নেতারাও এ বিষয়ে একই কথা বলছেন। তাঁদের মতে দেশ ও জাতি এখন নির্বাচনি ট্রেনে উঠেছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের সব ধোঁয়াশা কেটে গেছে। সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছুতে জনমানুষের আগ্রহ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার দেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের সরাসরি ভোটে জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে যাচ্ছে। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এখন জনগণের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতি এখন নির্বাচনি ট্রেনে উঠে গেছে। ইনশাআল্লাহ ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আর কোনো সংশয় নেই।
ইতোমধ্যে ঘোষিত বিএনপির ২৩৭ জন প্রার্থী তাঁদের নির্বাচনি এলাকায় মাঠে নেমে গেছেন। তাঁরা এখন স্ব-স্ব নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন- ভোটারদের মন জয় করতে। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্তের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের অনিষ্পন্ন আসনগুলোর জটিলতা নিরসনসহ জোটের শরিক ও সমমনাদের সঙ্গে আসন সমঝোতার প্রক্রিয়াও শেষের পথে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীও মাঠে আছে আগে থেকেই। নানা ইস্যু নিয়ে মাঠ গরমের চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনি প্রস্তুতির কাজ আগে থেকেই শুরু করেছে এই ইসলামি দলটি। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) বিভিন্ন এলাকায় তাদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই দলীয় প্রধান নাহিদ ইসলামসহ শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাঁদের স্ব-স্ব জোট থেকে নিজেদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পথে। তাঁদের কেউ কেউ ইতোমধ্যে নির্বাচনি মাঠেও নেমে গেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক দল এবং দেশের জনগণ এখন নির্বাচনমুখী। তারা এখন নির্বাচন ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করছে না। বিগত ১৮টি বছর মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। আমি নিজেও আমার নির্বাচনি এলাকায় যেতে পারিনি। মানুষ এখন ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। তারা জাতীয় নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে উদগ্রীব হয়ে আছে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মেঘ অনেকাংশেই কেটে গেছে। আমরা বিএনপির সঙ্গে যৌথভাবে নির্বাচন করছি। জোট আমাকে বগুড়া-২ এলাকার প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে সম্মান করেন। তিনি ভবিষ্যতে জাতীয় সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। বগুড়ার উন্নয়নে এলাকার কৃতী সন্তান তারেক রহমানের হাত ধরে কাজ করে যাব। বগুড়া সিটি করপোরেশন, বগুড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব উন্নয়নে আমরা কাজ করে যাব।’ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা অনেকাংশেই কেটে গেছে। সবাই এখন নির্বাচনমুখী হচ্ছে। তবে ষড়যন্ত্র এখনো থামেনি। এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই হতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। যারা নির্বাচন, সংস্কার, বিচারের পথরেখাকে ভূলুণ্ঠিত করতে চান, নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চান, তারা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবেন। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে সেই ষড়যন্ত্র আমাদের রুখে দিতে হবে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে সব সংশয় কেটে গেছে। দুটি নির্বাচন একই দিনে করার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের কিছু বিষয়ে ভিন্নমত থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংশয় অনেকটাই কেটে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে বিভাজনই জাতীয় নির্বাচন ভন্ডুলের কারণ হতে পারে। তবে আমরা মনে করি, এই সময়ে এসে একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনই সঠিক সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে সবার মতামতকেই গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নে সব দলকে এক থাকা জরুরি।