জুলাই গণ অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দিনটি ঘিরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নাশকতামূলক অপতৎপরতা প্রতিহত করতে নেওয়া হয়েছে সমন্বিত নিরাপত্তা ছক। রায়ের তারিখ ঘোষণার দিন ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে চালানো ককটেল হামলা ও আগুনসন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে সারা দেশে পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে চোখে পড়ছে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থান। চলছে সাঁজোয়া যানের টহল। রায়ের দিন ১৭ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আশপাশের এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র বলছে, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের দিনকে কেন্দ্র করেও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়াচ্ছে গুজব ও বিভিন্ন কর্মসূচির নামে উসকানিমূলক পোস্ট।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, বোমা হামলা, উসকানি, আগুনসন্ত্রাস ও ঝটিকা মিছিল প্রতিরোধে সারা দেশের পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। রায় ঘিরে নাশকতা ঠেকাতে প্রতিদিনই জেলা এসপিদের কড়া নির্দেশনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। জেলা ও উপজেলা শহর থেকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ঢাকামুখী যাত্রা ঠেকাতে আগে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, সেটি বহাল রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নাশকতা প্রতিরোধে সদর দপ্তর সবসময় সজাগ দৃষ্টি রাখছে। তিনি আরও বলেন, সমাজমাধ্যমে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে বেশি। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সাইবার ইউনিটগুলোকে প্রতিদিনই কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নাশকতা ঠেকাতে পুলিশের চেকপোস্ট জোরদার করা হবে। ফুট প্যাট্রোলিং ও মোবাইল প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি থাকবে সম্ভাব্য সব জায়গায়। রাজধানীর হোটেল, মোটেল, মেস ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বাসাবাড়িতেও রেট দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ককটেল বানানোর কারিগরদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, ১৩ নভেম্বর লকডাউন কর্মসূচি ঘিরে র্যাবের যেমন তৎপরতা ছিল, ১৭ নভেম্বর ঘিরেও একই ধরনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। যারা অপরাধী বা নাশকতার চেষ্টা করছে, তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাদের প্রতিহত করতে র্যাব সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে ১৭ নভেম্বর সোমবার। শেখ হাসিনার ছাড়াও অপর দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।