লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পুরান ভেলাবাড়ী গুচ্ছগ্রামে ভূমিহীনদের জন্য সরকারি বরাদ্দে সীমাহীন অনিয়ম হয়েছে। প্রকৃত সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা ঘর পেয়েছেন এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভেলাবাড়ী ইউনিয়নের দুই এলাকায় পুরোনো ব্যারাক ভেঙে ৫২টি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে সরকার। এর মধ্যে পুরান ভেলাবাড়ীতে ৪৬টি ও পূর্বভেলাবাড়ী কামারপাড়ায় রয়েছে ছয়টি ঘর। নিয়মানুযায়ী আগে যারা ব্যারাকে বসবাস করতেন এবং প্রকৃত ভূমিহীন তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর দেওয়া হবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ভূমিহীনদের অভিযোগ, বরাদ্দের তালিকায় রয়েছেন অনেক বিত্তশালী ব্যক্তি। যাদের পৈতৃক সম্পত্তি এবং বাজারে দোকান রয়েছে। অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে পূর্বভেলাবাড়ীর ভূমিহীন দাবিদার ও ব্যারাকের বাসিন্দা সাতজন গত ১০ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তারা উল্লেখ করেন, ‘আমরা প্রকৃত ভূমিহীন, অথচ যাদের জমি-বাড়ি-ব্যবসা সব আছে, তারা ঘর পেয়েছেন। আমরা তহসিলদার ও তৎকালীন ইউএনওর কাছে বারবার গিয়েও ঘর পাইনি।’ আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের আগে ব্যারাকে ২৬ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন ষাটোর্ধ্ব শেফালী বেগম। তার স্বামী আজিজ হোসেন মারা গেছেন ১৭ বছর আগে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবন্ধী। ২৬ বছর ধরে সরকারি ঘরে থাকি। নতুন করে ঘর বানানো হলো। আমাকে কিছু না জানিয়ে আমার ঘরটা দেওয়া হয়েছে একজন বিত্তশালী ব্যক্তিকে। কোথায় যাব আমি।’ বরাদ্দ পাওয়া এক বিত্তশালী পরিবারের সদস্য আজাহার আলীর ছেলে শাহআলম বলেন, ‘আমার বাবা আগে ভূমিহীন ছিলেন। এখন ভাইয়েরা মিলে বাজারে দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করি। জমি কিনে বাড়ি করেছি। ব্যারাকে আমরা ছিলাম, সেই হিসেবে ঘর পেয়েছি।’ আরেক প্রভাবশালী আর ফজর আলীর ছেলে মমিনুর বলেন, ‘জমি আছে, দোকান আছে তা সত্য। তবে ব্যারাকে আমাদের ঘর ছিল। তাই হয়তো আশ্রয়ণ প্রকল্পেও বরাদ্দ পেয়েছি।’
তৎকালীন সমবায় কর্মকর্তা ফজলে এলাহি তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ, তালিকা প্রস্তুতসহ সার্বিক কাজ ইউএনও, সহকারী কমিশনার ও তহসিলদার করেছেন। আমি শুধু মনিটরিং করেছি। আদিতমারীর ইউএনও বিধান কান্তি রায় বলেন, ‘আগের ইউএনওর সময়ে তালিকা হয়েছে। ব্যারাকের বাসিন্দাদের নাম অনুসারে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, যারা ঘর পেয়েছেন তাদের ডেকে যাচাইবাছাই করব।’ অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঘর বিতরণের তালিকা করার ক্ষেত্রে তহসিলদার, অ্যাসিল্যান্ড কিংবা অন্য কেউ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকলে কিংবা তাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।