সিরিজ নির্ধারণী লড়াইয়ে ব্যাটসম্যানদের সম্মিলিত চেষ্টায় বড় পুঁজিই গড়ল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু বোলাররা পারলেন না নিজেদের মেলে ধরতে। কামিল মিশারা ও কুসাল পেরেরার ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্বাগতিকদের উড়িয়ে সিরিজ নিশ্চিত করল শ্রীলঙ্কা।
হারারেতে রবিবার (৭ সেপ্টেম্বর) তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার জয় ৮ উইকেটে। প্রতিপক্ষের ১৯১ রান ১৪ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় সফরকারীরা। লঙ্কানদের জয়ে অবদান রাখেন ক্রিজে যাওয়া চার ব্যাটসম্যানই। ১ ছক্কা ও ৪টি চারে ২০ বলে ৩৩ রান করেন পাথুম নিসাঙ্কা। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ১৭ বলে ৩০ রান করতে ১ ছক্কা ও ৩টি চার মারেন কুসাল মেন্ডিস।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর বাকি কাজ সারেন মিশারা ও পেরেরা। তাদের অবিচ্ছিন্ন ৬৩ বল স্থায়ী ১১৭ রানের জুটিতে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার তৃতীয় উইকেটে শতরানের জুটি পেল দলটি।
৩টি ছক্কা ও ৬টি চারে ৪৩ বলে ৭৩ রানের চমৎকার ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন এই সিরিজ দিয়ে তিন বছর পর দলে ফেরা মিশারা। অভিজ্ঞ পেরেরার ব্যাট থেকে আসে ২টি ছক্কা ও ৪টি চারে ২৬ বলে ৪৬ রান। লঙ্কানদের ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডবে আড়ালে পড়ে যায় টাডিওয়ানাশে মারুমানির ১ ছক্কা ও ৬টি চারে গড়া ৫১ রানের ইনিংস।
আগের ম্যাচেই নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রানে (৮০) গুটিয়ে যাওয়ার তেতো স্বাদ পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই হতাশা পেছনে ফেলে এদিন দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই রিচার্ড এনগারাভাকে দুই চার মেরে আগ্রাসী শুরুর আভাস দেন নিসাঙ্কা। এই পেসারের পরের ওভারেই একটি করে ছক্কা ও চার মারেন লক্কান ওপেনার।
ব্লেসিং মুজারাবানির করা চতুর্থ ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কার পাশাপাশি দুটি ডাবল নেন মেন্ডিস। ওভার থেকে আসে ১৮ রান। শ্রীলঙ্কার ৫৮ রানের বিধ্বংসী উদ্বোধনী জুটি ভাঙে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে, ব্র্যাড ইভান্সের বলে মেন্ডিসের বিদায়ে। ওই ওভারের শেষ বলে চার মেরে ডানা মেলে দেন মিশারা।
অষ্টম ওভারে সিকান্দার রাজার বলে নিসাঙ্কা ড্রেসিং রুমে ফিরলে বাকি পথ দলকে টানেন মিশারা ও পেরেরা। তাদের ব্যাটে প্রায় প্রতি ওভারেই আসতে থাকে বাউন্ডারি। তাদের জুটি পঞ্চাশ স্পর্শ করে ৩৩ বলে। এরপর যেন চোখের পলকে জুটির রান হয়ে যায় একশ। পরের পঞ্চাশ রান আসে কেবল ২২ বলে।
চমৎকার ব্যাটিংয়ে নিজেকে মেলে ধরা মিশারা প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটির ছোঁয়া পান ৩৩ বলে। পঞ্চাশের পর ইভান্সকে ছক্কা ও মুজারাবানিকে দুটি চার মারেন তিনি। এনগারাভাকে চার মেরে দলকে কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌঁছে দেন পেরেরা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা জিম্বাবুয়ে মারুমানির ব্যাটে ভালো শুরু পায়। অপরপ্রান্তে তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ব্রায়ান বেনেট, শন উইলিয়ামস, রাজা। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ভালো কিছুর সম্ভাবনা জাগিয়ে ফেরান সবাই। ২ চারে ৮ বলে ১৩ রান করেন বেনেট। ১১ বলে ২৩ রান করতে ৫টি চার মারেন উইলিয়ামস। ১ ছক্কা ও ৩টি চারে ১৮ বলে ২৮ রান আসে রাজার ব্যাট থেকে।
৪০ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর ইনিংস বড় করতে পারেননি মারুমানিও। ২ ছক্কা ও ১ চারে ১৫ বলে ২৬ রান করেন রায়ান বার্ল। সঙ্গে বাকিদের টুকটাক অবদানে ১৯০ পর্যন্ত যেতে পারেন জিম্বাবুয়ে। কিন্তু লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি দলটির বোলাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৯১/৮ (বেনেট ১৩, মারুমানি৫১, উইলিয়ামস ২৩, রাজা ২৮, বার্ল ২৬, মুসেকিওয়া ১৮, মুনিয়োঙ্গা ১৩*, ইভান্স ২, মাপোসা ১, এনগারাভা ৪; পাথিরানা ৪-০-৪০-১, বিনুরা ৪-০-৪৮-১, চামিরা ৪-০-৩৩-২, আসালাঙ্কা ৩-০-১৯-০, হেমান্থা ৪-০-৩৮-৩, শানাকা ১-০-৯-০)
শ্রীলঙ্কা: ১৭.৪ ওভারে ১৯৩/২ (নিসাঙ্কা ৩৩, মেন্ডিস ৩০, মিশারা ৭৩*, পেরেরা ৪৬*; এনগারাভা ৩.৪-০-৪২-০, মুজারাবানি ৩-০-৪৩-০, ইভান্স ৩-০-২৮-১, মাপোসা ২-০-২৬-০, রাজা ৪-০-২৯-১, উইলিয়ামস ১-০-১০-০, বেনেট ১-০-১৩-০)
ফল: শ্রীলঙ্কা ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: কামিল মিশারা
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে শ্রীলঙ্কা ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা সিরিজ: দুশমান্থা চামিরা
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ